বুধবার (১৮ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসে এমন সুপারিশ করে আওয়ামী লীগ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সংলাপে ইসির সভাকক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি অংশ নেয়।
এ সময় আওয়ামী লীগ লিখিত এগারো দফা সুপারিশ তুলে ধরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
এক. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নির্বাচন পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্তি বা নির্বাচনকালীন তাদের নিয়োগের বিষয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যে দাবী উত্থাপন করা হয়েছে,তা দেশের বিরাজমান আইন ও সাংবিধানিক নিয়ম কানুনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে, ১৮৯৮ সালে প্রণীত ফৌজদারী কার্যবিধির্ ১২৯-১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালায় In aid to civil power শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে তার উল্লেখ রয়েছে।
উপরন্তু বর্তমানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসারসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জনবল ও সক্ষমতা পূর্ববর্তী যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বাহিনীকে সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাদের বিশেষায়িত অবস্থান বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দুই. সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি জনসংখ্যার বিশেষ করে আদমশুমারির সাথে সম্পর্কিত। সর্বশেষ ২০১১ সালে আদমশুমারির ওপর ভিত্তি করে (যা ২০১৩ সালে প্রকাশিত) ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন আদমশুমারী ব্যতীত পুনরায় এই সীমানা পুনর্নির্ধারণের কার্যক্রম গ্রহণে বিভিন্ন আইনগত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমতাবস্থায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের মতো একটি জটিল কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যেসব আইনানুগ পদক্ষেপ গৃহীত হয়ে থাকে, তথা খসড়া থেকে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত যে মহা কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে হয়, তা সময় স্বল্পতার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি না সে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া আবশ্যক। ইসির সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচন রয়েছে। সবদিক ভেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যকে ইসিকে অনুরোধ করছে আ’লীগ।
তিন. সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সকল বিধিবিধানের সঙ্গে জনমানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের ন্যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটদান প্রবর্তন।
চার. দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। কোনোভাবেই যেন কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির আনুগত্যশীল কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে এ দায়িত্ব দেওয়া না হয়।
পাঁচ. নির্বাচনে দিন গণমাধ্যম কর্মীদের নির্বাচনী বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদান। উপযুক্ত পরিচয়পত্র প্রদান ও তাদের দায়িত্ব কর্ম এলাকা নির্ধারণ করা।
ছয়. সকল প্রার্থীর এজেন্টদের (জাতীয় পরিচয়পত্রের) তালিকা নির্বাচনের পূর্বেই রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কাছে দাখিল করা এবং তাদের পরিচয় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক নিশ্চিকরণের পর ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ এবং ভোট শেষ না হওয়ার পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান।
এছাড়া এগারো দফা সুপারিশের অন্যগুলো হচ্ছে-পেশীশক্তি রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিতদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, দায়িত্ব অবহেলায় তাদের কঠোর শাস্তির বিধান, তৃণমূলের কর্মীদের মনোনয়নের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন, সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ।
সংলাপ থেকে বেরিয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রস্তাবগুলো দেখে নির্বাচন কমিশন বলেছে, এটা রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব মনে হয়নি। আমরা অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত পজিটিভ প্রস্তাব পেয়েছি। এই প্রস্তাবগুলো নিরপেক্ষ প্রস্তাব।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণের আইন বাংলায় করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নূরুল হুদার কমিশনকে সংলাপে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন:
দেশের সব সফল অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরে: সিইসি
বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯/আপডেট ১৩৫৭ ঘণ্টা
ইইউডি/আরআই