দলটির সঙ্গে আয়োজিত সংলাপের সূচনা বক্তব্যে বুধবার (১৮ অক্টোবর) ইসির সভাকক্ষে সিইসি এসব কথা বলেন। গত ১৫ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সিইসি বিএনপি ও তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের গুণগানও গেয়েছিলেন।
বুধবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে বক্তব্যের শুরুতেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ইয়ার মোহাম্মদ খান, শামসুল হক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
সিইসি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নিবেদিত নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, যা ছাত্র আন্দোলন হিসাবে আমরা জানি, তখনকার সফল নেতারা এখানে রয়েছেন। ’৭০-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বহু অর্জন, বহুমুখী, গণমুখী সকল আন্দোলন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ফসল।
তিনি বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ; ‘এবারের সংগ্রামে স্বাধীনতার সংগ্রাম’- বঙ্গবন্ধুর এমন আহ্বানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কন করে দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর হুকুমে এবং এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের অনেকের অনুপ্রেরণায়, নির্দেশে, পরিচালনায় আমরা তরুণ সন্তান বুকে গ্রেনেড ও কাঁধে অস্ত্র নিয়ে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ঐতিহাসিক সব সফল আন্দোলন আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে।
কে এম নুরুল হুদা আরও বলেন, ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশ গঠনের দায়িত্ব কাঁধে নেন। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দেশকে একটি সংবিধান উপহার দেন, কুটনৈতিক সাফল্যে বহুদেশের আনুকূল্য, সমর্থন অর্জন করেন। নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, ১৯৭৩ সালে জাতিকে প্রথম সংসদ নির্বাচন উপহার দেন এবং স্বাধীন দেশে প্রথম সংসদীয় সরকার গঠন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়।
১৯৭৪ সালের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির জনকের সপরিবারের হত্যার মধ্য দিয়ে জাতির কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বরণের পর দলটির কঠিন পরিস্থিতির পড়ে।
তিনি বলেন, জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। বহু বাধা বিপত্তি, প্রতিকূলতা, ভয়ঙ্কর সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দলকে সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে আসেন তিনি। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছয় বছরের মাথায় ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা মুসলিম বিশ্বের প্রথম মহিলা বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর হয়।
সিইসি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছে। উন্নয়নের প্রতিটি খাত; শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার, পরিবেশ সংরক্ষণে আজ বিশ্ব ধরিত্রীর মুকুট প্রধানমন্ত্রীর মাথায়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আজ মধ্যম আয়ে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক সমাধান অর্জন বিশ্ব মাতৃকার আসনে সমাসীন প্রধানমন্ত্রী।
সিইসির বক্তব্যের পর নির্বাচন কমিশন সচিব বক্তব্য দেন। এরপর শুরু হয় আনুষ্ঠানিক আলোচনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে।
আরও পড়ুন:
সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও সেনা নয়, তবে ইভিএম চায় আ’লীগ
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৭
ইইউডি/এমজেএফ