মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে সিইসি কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে তারা এমন পরামর্শ দেন।
সংলাপ থেকে বেরিয়ে এক-এগারো সরকারের সময়কার সিইসি এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশনকে কার্যকরী করতে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, কিছু জিনিস আছে যা ইসির আওতাভুক্ত। কিছু জিনিস আছে ইসির কিছু করার নেই। সীমানা নির্ধারণের ফলে গ্রামে আসন সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এজন্য ইসিকে দোষ দেওয়া ঠিক হবে না। কেননা, আইন যেভাবে আছে তাতে এমনই হবে। তবে চাইলে আইন সংশোধন করে কীভাবে আসনের বিন্যাস করা যায় তা নির্ধারণ করতে হবে। শহরে বাড়ানো হবে নাকি গ্রামে বাড়ানো হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত।
তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে এই আলোচনার সমাধান হবে না। কেননা, নির্বাচনের আর এক বছর বাকি আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা যদি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা যদি বলেন, এটা আর হবে না। এটা পারবেন না। কেননা, এটা সংবিধানে আছে। কাজেই যে পরিবশে এবং অবস্থা আছে এটা মেনে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। ইসি তো এই পরিবর্তন আনতে পারে না। সুতরাং এটা নিয়ে আমাদের আলাপই হয়নি। কেননা, এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়।
বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন নিয়ে শামসুল হুদা বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী এখন নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ আলাদা। কাজেই তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া, এটা একটা রাজনৈতিক প্রশ্ন। একটা আসনে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেবেন এবং তারা ব্যবস্থা নিতে পারবে তার জন্যও আইনে আছে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এজন্য নির্বাচন কমিশনকে আস্থা অর্জন করতে হবে। দলগুলো যদি মনে করে মোটামুটি ভালো পরিবেশ তবেই তারা আসবে। ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে এবং বাড়ি ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা বিজিবি, র্যাব এবং পুলিশের মাধ্যমেই করা সম্ভব।
সাবেক সিইসি বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ইনডিসিপ্লিন। এটা ঠিক করতে না পারলে নিউক্লিয়ার অয়েপন দিয়েও নির্বাচন সুষ্ঠু করা যাবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটারকেই দায়িত্ব দিতে হবে। ফাইভ স্টার, থ্রি স্টার নিয়ে ভোটের দিন ঘোরার দরকার নেই। এসপি, ডিসি’র দরকার নেই। ভোটাররাই তাদের এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। এজন্য ৫শ জন ভোটারের জন্য একটি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র গড়ে দিতে হবে। সরকারি কর্মচারী দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
সাবেক নির্বাচন ছুহুল হুসাইন বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এই ইস্যুটা রাজনৈতিক দলের। এটা সেটেলের বিষয়। সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা যে দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তারা থাকবে আইন অনুযায়ী। আমার মনে হয়ে, দলগুলোর মধ্যে গ্যাপ দূর করতে ইসি একটা উদ্যোগ নিতে পারে। এতে তারা সফল হবে এর কোনো গ্যারেন্টি নেই। তবে সফল না হলেও কোনো দোষ থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে নির্বাচন কমিশনকে শক্ত ও কঠোর হাতে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া সংসদ নির্বাচনের ছয় লাখ লোকবলকে মোটিভেট করতে হবে নিরপেক্ষ থাকার জন্য। কেননা, তারা নিরপেক্ষ না থাকলে নির্বাচন নিরপক্ষে হবে না। এজন্য যাদের নিয়োগ করা হবে, তাদের আগে থেকেই চিহ্নত করে প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন করতে হবে। এছাড়া প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও আমরা বলেছি। এক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং ১৬ ও ১৭ আগস্ট সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ইসি। এরপর গত ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। রোববার (২২ অক্টোবর) নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে এবং সোমাবার (২৩ অক্টোবর) নারী নেত্রীদের সঙ্গে সংলাপ করেছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার শেষ হলো ধারাবাহিক সংলাপ।
এ বিষয়ে আরও পড়তে ক্লিক করুন: আজ খুব হালকা অনুভব করছি: সিইসি
বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৭/আপডটে ১৬০০ ঘণ্টা
ইইউডি/আইএ