ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

এনআইডি সংশোধন: নিজেদের প্রণীত আইন মানছে না ইসি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
এনআইডি সংশোধন: নিজেদের প্রণীত আইন মানছে না ইসি নমুনা জাতীয় পরিচয়পত্র

ঢাকা: নূরজাহান আক্তার। ভোটার হয়েছিলেন মতিঝিল এলাকায়। কিন্তু নামের বানান জাতীয় পরিচয়পত্রে ভিন্নভাবে এসেছে। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের সঙ্গে নামের বানানের একটি অংশের মিল না থাকায় তিনি বেতন উত্তোলন করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন।

এই সমস্যার প্রতিকার পেতে তিনি প্রায় পাঁচ ‍মাস আগে আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কিন্তু এখনো তার সমস্যার সমাধান হবে কি হবে না, কিংবা সমাধানের জন্য তাকে কি করতে হবে তার কোনো কিছু জানানো হয়নি।

টাঙ্গাইলের ভোটার রহিম উদ্দীন। গত বছরের অক্টোবর তিনি তার নামের বানান শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অনুযায়ী সংশোধন করে নিতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু তাকে দেখা করার জন্য দুই মাস পর সময় দেওয়া হয় স্লিপে।

নূরজাহান আক্তার ও রহিম উদ্দীনকে এখানে ছদ্মনামে উল্লেখ করা হয়েছে সঙ্গত কারণে। তাদের মত হাজার হাজার নাগরিক হারহামেশাই এ সমস্যা নিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন, তা এনআইডি কার্যালয়ে গেলেই চোখে পড়ে। কেননা, সব সময় এখানে এমন সমস্যার সমাধান প্রত্যাশী মানুষ দেখতে পাওয়া যায়।

আইনে আছে, এক মাসের মধ্যে এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে জানাতে হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এসব দেখেও যেন দেখছে না। প্রতিদিনই নাগরিকরা এমন সমস্যা নিয়ে ঘোরাফেরা করছে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনুবিভাগে।

মাঠ কর্মকর্তারা কোনো আবেদনকারীর আবেদন নিষ্পত্তির জন্য একমাস পর সময় বেঁধে দেওয়ার পরও  কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না কেন্দ্র থেকে।

এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে যে, আবেদন জমা দেওয়ার একমাস পরেও ইন্টারনাল সিস্টেমে তা অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। ফলে সে আবেদন সেভাবেই পরে (আন এটেন্ডেড) পরে থাকছে দিনের পর দিন। আর এ নিয়ে ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। কার্যত, নির্বাচন কমিশন (ইসি) তার নিজের আইন নিজেই মানছে না।

অথচ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে-সংশোধনের “জরুরি”  আবেদনের  ক্ষেত্রে ৭ (সাত) কার্যদিবস এবং “সাধারণ” আবেদনের ক্ষেত্রে ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে, কমিশন সন্তুষ্ট হলে অংশ-ক এ উল্লিখিত (আবেদন পত্রের যে অংশে একটি নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দেখা করতে বলেন) তারিখে, পূর্বের জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত প্রদান সাপেক্ষে, একই নম্বরে নূতন জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করিবে এবং, প্রয়োজনে, সংরক্ষিত তথ্য উপাত্ত সংশোধন করিবে। একই সঙ্গে তা আবেদনকারী  বা  ক্ষেত্রমত,  তাহার আইনানুগ অভিভাবককে জানাবে।

এনআইডি’র যে তথ্যগুলো প্রদর্শিত থাকে না সেগুলো সংশোধনের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা হয়েছে প্রবিধানমালায়।

এছাড়া আইন অনুযায়ী, ‘আবেদন জমা হওয়ার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদনে উল্লেখিত তথ্য ও দলিলাদি যাচাই এবং প্রয়োজনে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করিয়া ওই আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করতে পারেন। ’

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নামঞ্জুরের আদেশ অবহিত হওবার ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) কার্যদিবসের মধ্যে আবেদনকারী বা ক্ষেত্রমতে তার আইনানুগ অভিভাবক ওই আদেশের  বিরুদ্ধে  কমিশন  বরাবর  আপিল  করিতে  পারেন। ’

আপিল  প্রাপ্তির  ৬০  (ষাট) কার্যদিবসের  মধ্যে  কমিশন  কর্তৃক  উক্ত  আপিল  নিষ্পত্তি  করতে হয়। এক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হবে বলেও আইনে উল্লেখ রয়েছে।

এই প্রবিধানমালা নির্বাচন কমিশনই তৈরি করেছে। কিন্ত বাস্তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কাউকেই সময় দেন না। আর এক মাস সময় দিলেও সে সময়ের মধ্যে তিনি কিছুই জানান না। সংশ্লিষ্ট মাঠ কর্মকর্তা ঢাকায় আবেদন পাঠিয়ে তার কোনো খবরই রাখেন না। আইন অনুযায়ী, তার দেওয়া সময়ের মধ্যেই আবেদনকারীকে আপডেট জানানোর কথা।

কিন্তু বাস্তবে ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে/ গোয়ালে নাই’ অবস্থা। ফলে মানুষের ভোগান্তির পাহাড় জমলেও সে ব্যাপারে উদাসীন নির্বাচন কমিশন।

শুধু তাই নয়, কমিশন সন্তুষ্ট হয়ে ঢাকা থেকে আবেদনকারীর ভুল সংশোধন করে, নতুন এনআইডি থানা নির্বাচন অফিসে পাঠালেও সংশ্লিষ্ট অফিসার আবেদনকারীকে জানান না কোনো আপডেট। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকেই বারবার ধর্ণা দিতে হয়।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদন নামঞ্জুর করার পর কমিশনে আপিল করার যে সুযোগ রয়েছে সে তথ্যটুকুও জানানো হয় না। ফলে সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই।

এ বিষয়ে ইসির ‌উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানান, মাঠ পর্যায়ের এই অন্যায় কাজটির বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের কোনো নজর নেই। অথচ এই কারণেই মাসের পর মাস ঘুরতে হয় ভুক্তভোগীকে।

ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নিজের করা আইন নির্বাচন কমিশন নিজেই মানছে না।

বাংলাদেশ সময়:২০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
ইইউডি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।