শহরের একবারে প্রাণকেন্দ্রে গুপ্তপাড়ায় প্রধান সড়ক থেকে একটি গলি চলে গেছে দক্ষিণ দিকে। ৫০ ফুটের মতো হেঁটে গেলেই গলির ‘বাঁ’ পাশে মেয়র পদপ্রার্থী ঝন্টুর বাড়ি আর ‘ডান’ পাশে একটি মসজিদ।
দো’তলা বাড়ির নিচের তলায় বৈঠক খানা। সেখানে লোকজন এসে বসে আছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে প্যাচানো সিঁড়ি ধরেই উপরে ওঠলেই সামনে পড়ে ডাইনিং রুম। সেখানে একটি সোফা পাতা রয়েছে।
ঝন্টুর ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ মিঠুকে পরিচয় দিলে একটা শয়ন কক্ষে নিয়ে গেলেন। ঢুকেই চোখে পড়লো বেশ কয়েকজন লোক সেখানেও বসে আছেন। খাটের অপর পাশে থাকা ফাঁকা সোফায় বসার জায়গা পাওয়া গেলো।
অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। এক সময় আসলেন গত পাঁচবছর ক্ষমতায় থাকা রসিকের প্রথম মেয়র সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু। ৬৫ বছরের এ প্রবীণ যেন শরীরের ভার বইতে পারছিলেন না। অনেকটা হেলেদুলেই ধীর পায়ে এসে বসলেন খাটের একদিকে।
সোফা থেকে উঠে এসে সালাম দিয়ে পরিচয় দিতেই বললেন, কী বলবেন বলেন। শুরু হলো কথোপকথন। বাংলানিউজের সঙ্গে এ মেয়র প্রার্থীর আলাপচারিতা হুবহু তুলে ধরা হলো পাঠক ও ভোটারদের জন্য।
বাংলানিউজ: আপনি তো প্রথম মেয়র ছিলেন, এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য পরিকল্পনা কি? আপনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কী?
ঝন্টু: আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন করি না। মানুষ সেটা জানে। ভোট দিলে দেবে, না দিলে নাই।
বাংলানিউজ: প্রথমবার তো নির্দলীয় নির্বাচন হয়েছে। এবার দলীয় প্রতীকে (নৌকা মার্কায়) ভোট করছেন। ভোটারদের কতটুকু সাপোর্ট পাবেন বলে মনে করেন?
ঝন্টু: এটা ভোটারদের বিষয়। তারাই জানেন কি করবেন। আমি প্রতীক পেয়েছি- নৌকা। আমায় যারা ভোট দেবেন, নৌকা মার্কাতেই দেবেন।
বাংলানিউজ: নির্বাচনে ভোটারদের কাছে কেমন প্রত্যাশা করেন?
ঝন্টু: আমি তো বলবো আমার জয় শতভাগ নিশ্চিত। আমাকেই সবাই ভোট দেবে। নিজের গায়ের দুধ কি আর কেউ খারাপ বলে?
বাংলানিউজ: শহরের বাইরের ভোটাররা বলছেন আপনি গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে তাদের কোনো উন্নয়ন করেননি। এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন কিভাবে?
ঝন্টু: এতো বিশাল এলাকা নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন। একদিনেই তো আর সব এলাকায় উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এরশাদ ২৭ বছর এমপি (সংসদ সদস্য) ছিলেন। কি উন্নয়ন করেছেন? আমি তার চাইতে বেশি করেছি। দুই শতাধিক রাস্তার কাজ করেছি। কাজেই যারা এসব বলছেন, তারা বিরোধী পক্ষ।
বাংলানিউজ: শহরের বর্ধিত অংশ (পৌরসভা থেকে পাঁচ বছর আগে সিটিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলো) উন্নয়ন করতে না পারার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা কি ছিল?
ঝন্টু: বাধা কিছুই না, এলাকাটা বড়। পাঁচ বছর শহরে উন্নয়ন করতে হয়েছে। আরো সময় পেলে গ্রামেও উন্নয়ন করতাম।
বাংলানিউজ: এবার নির্বাচনে জয়ী হলে সবার আগে কী করবেন?
ঝন্টু: বিগত মেয়াদে গ্রামে উন্নয়ন করতে পারিনি। এবার জয়ী হলে প্রথমেই গ্রামে উন্নয়ন করবো।
বাংলানিউজ: আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো জনগণ আপনাকে কাছে পায় না। এমন কি আজকের প্রার্থী-জনগণ মুখোমুখি অনুষ্ঠানেও যাননি। এই এড়িয়ে চলার কারণ কি?
ঝন্টু: ওসব অনুষ্ঠানে যেয়ে কি হবে? খালি খালি সময় নষ্ট। এর চেয়ে প্রচারণায় থাকা ভাল। তাই যাইনি। আর এড়িয়ে চলি নাতো। আমার কাছে সবাই আসে।
বাংলানিউজ: ধন্যবাদ আপনাকে।
ঝন্টু: জ্বি, ঠিক আছে। এবার আপনে আসেন। আমার অনেক কাজ আছে।
আগামী ২১ ডিসেম্বর রসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
ইইউডি/বিএস