ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

মোস্তফার পুঁজি ব্যক্তি ইমেজ ও লাঙ্গল, ঝন্টুর নৌকা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
মোস্তফার পুঁজি ব্যক্তি ইমেজ ও লাঙ্গল, ঝন্টুর নৌকা সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু ও মোস্তাফিজার রহমান

রংপুর থেকে ফিরে: আর মাত্র পাঁচদিন। ঘনিয়ে এসেছে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন। প্রার্থীরা শেষের দিকে এসে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। বসে নেই ভোটার সমর্থকরাও। তারাও প্রার্থীর সঙ্গে থেকে বা যার যার নিজের মতো করেই পছন্দের প্রার্থীর শিবিরে অন্যদের টানতে নানা পন্থ‍া অবলম্বন করছেন।

সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানাগেছে। এলাকাবাসীর মতে, এবারের নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ায় হাড্ডাহাডি লড়াই হবে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টুর।

 
মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এরশাদের শাসনামলে একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। তখন থেকেই রংপুরের রাজনীতিতে তার নাম পাকাপোক্তভাবে লেখা হয়ে যায়। কেননা, সে সময়ই তিনি সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি পৌঁছান। ধীরে ধীরে তিনি সাধারণ মানুষের খুব পছন্দের নেতা হয়ে ওঠেন। কেবল মাত্র তার দরদী মনোভাব এবং ভাল আচরণ দিয়ে জয় করে নেন মানুষের মন।


২০১২ সালে রসিক সিটি প্রথমবার ভোট হলে, সে সময় তিনি প্রার্থী হন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় পার্টি থেকে তাকে বহিষ্কারও করেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপরও তিনি ওই নির্বাচনে প্রায় ৭৮ হাজার ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হন। আর বিজয়ী হন সে সময়কার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী ওই নির্বাচনে মোস্তফার চেয়ে কম ভোট পান।  

 
ঝন্টু নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন হতে থাকেন। কোনো অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে সাধারণ ভোটার না আনলেও তার আচরণের প্রতি ব্যাপক রুষ্ট ভোটাররা। এছাড়া বিপদে তার কাছাকাছি যেতে পারতেন না বলে ভোটারদের অভিযোগ খুব জোরালো। অন্যদিকে শহরের বর্ধিতাংশে তার উন্নয়ন কার্যক্রম না থাকাটাও ভোটারদের একটা বিরাট ‍অংশের কাছে বিরাগভাজনের অন্যতম কারণ। এই অবস্থায় ঝন্টুর কোনো ব্যক্তিগত ইমেজ নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে তার পুঁজি কেবল মাত্র আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’।

 
অন্যদিকে ঝন্টু ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে লাঙ্গলের সমর্থন ছাড়াই পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট। সে সময় মাত্র ২৮ হাজার ৪৫০ ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে মোস্তফার এতো ভোট কেবল তার ব্যক্তিগত ইমেজের কারণেই এসেছে বলে মনে করছেন অনেকে। এবার যারা ঝন্টুর প্রতি বিরাগভাজন তাদের ভোটও মোস্তফার কাছে চলে আসার সম্ভাবনার কথাও বলছেন অনেক নগরবাসী। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক।


নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য আশরতপুরের বাসিন্দা একেএম মাসুদ রানা বাংলানিউজকে বলেন, ঝন্টু আয়রন ম্যানের মতো। যা বলেন, তাই করেন। তার এ আচরণে ভোটাররা হয়তো রুষ্ট হয়ে থাকবেন। নৌকা প্রতীক তার শক্তির জায়গা। আর মোস্তফা সাধারণের কাতারে নেমে এসেছেন। মিশে গেছেন সবার সঙ্গে। তাকে প্রায় সবাই পছন্দ করেন। তারওপর লাঙ্গলের একটা জনপ্রিয়তা রংপুরে আছেই। সে হিসেবে মোস্তফার শক্তি তার ইমেজ আর জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল।


৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ঝন্টুর কাছে যাওয়াই যায় না। মানুষের কোনো কথাই শুনেন না। গালাগালি করেন। মানুষ তার ব্যবহারে খুব ক্ষুব্ধ। ভোটে তার ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে সাধারণ মানুষ। এখন নৌকা মার্কার জোরে যদি তিনি পার হন।

 
অন্যদিকে মোস্তফা সবার সুখে, দুখে পাশে থাকেন। ভালো আচরণ করেন। তার ওপর তিনি এবার জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

 
আগামী ২১ ডিসেম্বর রসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ (মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র এটিএম গোলাম মোস্তফা (হাতপাখা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি’র (এনপিপি) সেলিম আখতার (আম) এবং জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার (হাতি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নগরীর ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭৯ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নাদিরা খানম নামে তৃতীয় লিঙ্গের এক প্রার্থীও রয়েছেন।

 
নির্বাচনে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন ভোটার তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ জন পুরুষ ভোটার এবং ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন নারী ভোটার রয়েছেন।


বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
ইইউডি/বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।