ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নৌকা নয়, ঝন্টুর পরাজয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
নৌকা নয়, ঝন্টুর পরাজয় সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু/ফাইল ছবি

রংপুর থেকে: সিটি নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন সাবেক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, জিতে গেছেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেও ব্যক্তি ঝন্টুর প্রতি ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে ফলাফলে। জাতীয় পার্টির ঘাঁটি রংপুরে মোস্তফার ব্যক্তি ইমেজের চেয়ে লাঙ্গল প্রতীকেই বেশি প্রভাব পড়েছে।

নির্বাচন উপলক্ষে রংপুর পুলিশ লাইনের পুলিশ হলে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে ফল আসার সময়ই অনেকেই বলাবলি করছিলেন ঝন্টুর ‘ব্যক্তিগত কৃতকর্মের’ কথা। ভোটের আগেও ঝন্টুর প্রতি সাধারণ মানুষের যে মনোভাব তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

ঝন্টুর প্রতি বিরাগভাজন হয়ে অনেকেই ফেসবুকেও মন্তব্য করছিলেন।
 
জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গাও বলছিলেন সাধারণ মানুষ ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ দেখিয়েছে ঝন্টুর প্রতি। কিন্তু নৌকা বা আওয়ামী লীগ নিয়ে বিরুপ মন্তব্য শোনা যায়নি। রংপুরের উন্নয়নে দলীয় মেয়র প্রয়োজন সেটাও বলাবলি করেছেন মানুষ।
 
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটে লাঙ্গল প্রতীকে মোস্তফা ৯৮ হাজার ৮৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন জাপার এ প্রার্থী।
 
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র ঝন্টু পেয়েছেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট। আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট।
 
বিপুল বিজয়ে রাতেই মোস্তফা বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে বলেছিলেন, উন্নয়ন কম হলেও অ্যাডজাস্ট করা যায়, তবে প্রথমে দরকার গুড বিহ্যাভিয়ার। আচরণটাই ভালো করতে হবে।
 
ব্যক্তি ঝন্টুর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের নানা অভিযোগ। একরোখা স্বভাবের ঝন্টুর কাছে যারা গেছেন তাদেরকে নানাভাবে বিরক্তি নিয়েই ফিরতে হয়েছে। আর সেই বিষয়টি অনুধাবন করে বলেছেন জয়ী প্রার্থী মোস্তফা।
 
তিনি বলেন, ‘যে মানুষগুলো আপনাকে নির্বাচিত করলো, যদি খারাপ আচরণ করেন তাহলে জনপ্রিয়তা থাকবে না। আমি সেই বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো। ’
 
ফলাফল প্রকাশের সময় পুলিশ হলে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। নির্বাচনে ব্যক্তি ঝন্টুর দুর্নীতির প্রতি মানুষের ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির এ নেতা।
 
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরাজয় হয়নি। বরং এ পরাজয় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ঝন্টুর সীমাহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানুষের প্রতি দুর্ব্যবহার, সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন তহবিলের অর্থ তছরুপ এবং রংপুর নগরীর সুষম উন্নয়নে ব্যর্থতার কারণেই। তাই মানুষ নৌকা মার্কার প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। এটি ছিল ব্যক্তি ঝন্টুর প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ভাষা। এরই বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে রসিক নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে।
 
তিনি আরও বলেন, মানুষ ব্যক্তি ঝন্টুকে বয়কট করেছে। এই ভোট ছিল সেই ক্ষোভেরই ভাষা। যা প্রতিফলিত হয়েছে ভোটের ফলাফলের মধ্য দিয়ে।
 
এদিকে প্রার্থীর রাজনৈতিক পরাজয় হলেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিজয় হয়েছে বলে মনে করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
 
নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় জানাতে গিয়ে কাদের বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে ভূমিকা পালন করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের রেকর্ড রেখে যাচ্ছে। আমি বলবো, এটা গণতন্ত্রের বিজয়। আমরা এ নির্বাচনকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে দেখছি। আমরা মনে করি, এ নির্বাচনের ফলাফল আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির জন্য একটি মেসেজ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।