নির্বাচন নিয়ে যখন চারদিকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়, তখন এক হাস্যরসের জন্ম দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দারোয়ান, মালি এমনকি ঝাড়ুদারকেও।
এমন কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম, যিনি সম্প্রতি ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় অবসরে গেছেন। নির্বাচনের ইতিহাসে এমন কাণ্ড আর ঘটেনি।
মো. শাহ আলম সে সময় ১১ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যারা কিনা নিজের স্বাক্ষরও ঠিকমতো দিতে জানতেন না।
রাজধানীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওই ১১ জন কর্মচারী হলেন-মো. শাহজাহান (দারোয়ান), মো. শুক্কুর আলী (দারোয়ান), মো. মোজ্জামেল হক (দারোয়ান), মো. জামাল (নৈশ প্রহরী), মো. সামসুল হক (দারোয়ান), মো. একরামুল হক (মালি), মো. কবীর হোসেন (সুইপার), পারুল আক্তার (আয়া), মনোয়ারা বেগম (পিয়ন), দেলোয়ারা খাতুন (ঝাড়ুদার) ও রুনা আক্তার (ঝাড়ুদার)। নিয়োগের চিঠি পেয়ে নিজেরাই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করলে বিষয়টি সামনে আসে। এনিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হলে নির্বাচন কমিশন দ্রুত তাদের অব্যাহতি দেয়।
আগামী ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনেও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। অতীতের সেই কাণ্ডজ্ঞানহীন কাণ্ড যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্বাচন কমিশন দু’টি সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকেই একটি বিশেষ নির্দেশ পাঠিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে-কোনোক্রমেই যেন পূর্বতন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর গ্রেড ১৭ এর নিচে) বা এ পর্যায়ের কোনো কর্মচারীকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া না হয়। ’
সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার বিধি ৮ অনুযায়ী-রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচনের পোলিং কর্মকর্তার প্যানেল তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা পাঠাতে অনুরোধ করে থাকেন।
আরও পড়ুন: দারোয়ান, মালী, ঝাড়ুদারও পোলিং কর্মকর্তা!
রিটার্নিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের পাঠানো তালিকা থেকে প্যানেল প্রস্তুত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি কমিশনের অধীনে নিয়োগ করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের লিখিতভাবে অনুরোধ করেন এবং তার একটি কপি নির্বাচন কমিশনে পাঠান। এভাবেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদ্বয়ের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে-কোনো বিতর্কিত ও দলীয় ব্যক্তি বা কোনো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা যাতে নিয়োগ দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তা পদে দায়িত্ববান এবং শারীরিক ও মানসিক অধিকতর সামর্থ্যের প্রাধান্য দিতে হবে।
গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদ্বয়ের কাছে নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন ইসির যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহাম্মদ খান।
এরই মধ্যে দুই সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ। আগামী ১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হবে। এ নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল। আর প্রতীক বরাদ্দ ২৪ এপ্রিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
ইইউডি/এসআই