সীমানা পুনর্নির্ধারণ সক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
৪০টি আসনের সীমানা পরিবর্তনের জন্য সম্প্রতি খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছিল নির্বাচন কমিশন।
খসড়া তালিকায় অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন ঢাকার কেরানীগঞ্জে দু’টির পরিবর্তে একটি আসন এবং সাভার ভেঙে দু’টি আসন করতে চেয়েছিল।
৪০টি থেকে কমিয়ে ২৫ আসনের সীমানা পরিবর্তনের যৌক্তিকতা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন উত্থাপন করলে রফিকুল ইসলাম তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমরা ৪০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে ৩’শ আসনের গেজেট প্রকাশ করেছিলাম। এসব আসনের বিপরীতে ৬০ আসনের ওপর দাখিল করা দাবি-আপত্তি নিয়ে আমরা শুনানি করেছি। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম আবেদন এসেছিল। কোথাও জনসংখ্যার ভারসাম্য রাখার আবেদন এসেছে। কোথাও এসেছে ‘ম্যাসিভ চেঞ্জ’ নিয়ে আবেদন। তাই এক কথায় জবাব দেওয়া কঠিন।
আওয়ামী লীগের চাপে সীমানা পুনির্নির্ধারণ করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, চাপে যদি বলেন, উনারা যেটা বলেছেন, শুনানিতে যা বলেছেন, ২০১৩ সালের সীমানার পক্ষে। ২০১৩ সালের কিন্তু সীমানায় নেই। বেশিভাগ আসনকে আমরা অখন্ডিত করেছি।
সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীদের কোনো প্রভাব মোকাবেলা করেছেন কিনা-এ প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ঢাকায় পরিবর্তনের চিন্তা করেছিলাম। একটা আসন পরিবর্তন করলে পাঁচ সাতটা পরিবর্তন হয়ে যায়। একটার পক্ষে-বিপক্ষে আমরা মতামত পেয়েছি। অন্য পাঁচটা আসনে কোনো ক্রমেই সমর্থন করে না তারা। সীমানা নির্ধারণ কিন্তু আসলে জনগণের জন্য, জনপ্রতিনিধিদের জন্য এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জন্য। তাদের বক্তব্য ছাড়া সীমানা নির্ধারণ যৌক্তিক নয়। শুনানিতে যে বক্তব্য এসেছে সেগুলো চুল চেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
‘আপনি যদি বলেন আওয়ামী লীগের, হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যে দাবি ছিল, সে দাবিটা গৃহীত হয়েছে শুনানির মাধ্যমে। আবার কোনো দাবি গৃহীত হয় নাই। অন্যদের বক্তব্যকে প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। ’
নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, আমরা দেখেছি, মাথার মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অক্টোবরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করবো। সময় আছে ৫ মাস। ওটা মাথায় নিয়েও কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তাই বড় ধরনের পরিবর্তন আনলে যৌক্তিক হবে কি না, এসব নিয়ে ভাবতে হয়েছে।
অক্টোবরেই তফসিল ঘোষণা করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অক্টোবরের মধ্যেই ঘোষণা করতে হবে। আমি কিন্তু ডেট বলিনি। ওটা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে অক্টোবরের কখন তফসিল ঘোষণা করা হবে।
সংবিধান অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন অনুযায়ী, আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশের পর জনসংখ্যা, ভোটার অনুপাত, ভৌগলিক অখণ্ডতা এবং প্রশাসনিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার বিধান রয়েছে। সর্বশেষ যে আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে তার ভিত্তিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে একবার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। একই আদমশুমারির প্রতিবেদন নিয়ে দু’বার সীমানায় পরিবর্তন আনা হল। নির্বাচন কমিশন বলছে এবার ভৌগলিক অখণ্ডতাকে প্রধান্য দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৫টি আসনের বেশিরভাগই ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের সীমানায় ফিরে গেছে। আর ২৭৫টি আসন ২০১৪ সালের দশম সংসদের অবস্থায় রয়ে গেল।
বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিল।
কমিশন সভা শেষে ইসির মিডিয়া সেন্টারে সোমবার (৩০ এপ্রিল) আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) এসএম আসাদুজ্জামান, আবুল কাশেম উপস্থিত ছিলেন।
২৫ সংসদীয় আসনে সীমানা পরিবর্তন
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৮
ইইউডি/এমজেএফ