অধিকতর উন্নত এ ইভিএম দিয়ে গত ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সীমিত আকারে ভোটগ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে সাফল্যও আসে ব্যাপক।
সে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারের (১৫ মে) খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে দু’টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সোমবার (১৪ মে) ভোটারদের প্রশিক্ষিত করে ব্যাপক প্রচারণার পর এলাকায় মক ভোটিংও করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপিসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বিরাট অংশ ইভিএম দিয়ে ভোটগ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, এ মেশিন দিয়ে কোনো প্রকার কারচুরি করার সুযোগ নেই। কেননা, প্রত্যেক ভোটারকে আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট দিতে হয়।
ইভিএম দিয়ে কিভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোট দেওয়া যায়, তা বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ভোটগ্রহণ শুরু পূর্ব অবস্থা: ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্বেই উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাদের নির্বাচনী এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টদের মেশিনটি দেখানো হয়। একইসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার প্রতীক ঠিক আছে কি-না তা নিশ্চিত করা হয়।
ভোটগ্রহণ: ভোটকক্ষে নিয়োজিত সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ইভিএম মেশিন সেটআপ করবেন। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কেন্দ্রের সব ভোটকক্ষে ব্যবহৃত ভোটিং মেশিন চালু করার নিরাপত্তা ‘পিন কোড’ এবং পাসওয়ার্ড গোপনীয়ভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর থেকে গ্রহণ, সংরক্ষণ এবং সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে সরবরাহ করবেন। এক্ষেত্রে ‘অডিট কার্ড’ প্রবেশ করিয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা/সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা পাসওয়ার্ড/পিন প্রদান করে মেশিনের জিজ্ঞাসা অনুযায়ী আঙুলের ছাপ দিয়ে ইভিএম ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করবেন।
ভোটগ্রহণ শুরুর আগে মেশিনের অপর কার্ড স্লটে ‘পোলিং কার্ড’ প্রবেশ করাবেন। এবার ভোটগ্রহণের জন্য মেশিন সম্পূর্ণ প্রস্তুত হলে ‘অডিট কার্ড’ বের করে নেবেন। সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোটার শনাক্ত করতে প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন স্মার্টকার্ড।
একজন পোলিং কর্মকর্তা ভোটার তালিকার হার্ডকপির সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্তকৃত ভোটার নম্বর চিহ্নিত করবেন। অপর পোলিং কর্মকর্তা বৈধ ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দেবেন এবং ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন।
ভোটগ্রহণ বিকেল চারটায় শেষ হলে সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা ইভিএমে পুনরায় অডিট কার্ড প্রবেশ করিয়ে ‘এন্ড পোল’ বোতাম চেপে ভোটগ্রহণ শেষ করবেন। এরপর প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সব ভোটকক্ষের মেশিন থেকে ‘অডিট কার্ড’ দিয়ে ইভিএম থেকে প্রথমে ফাইনাল রেজাল্ট মুদ্রণ করবেন। মুদ্রণ শেষ হলে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল একত্রিত করে উপস্থিত প্রার্থীদের বা তার প্রতিনিধিদের কাছে উপস্থাপন করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া সরবরাকৃত ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে ফলাফল প্রকাশ/কপি বিতরণ এবং সব ধাপ সম্পন্ন করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ভোটিং মেশিন, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য মালামালসহ ফলাফল জমা দেবেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।
পিন/ পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা: প্রতিটি ইভিএমের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন কার্ড এবং মেশিন চালু করার পিন/পাসওয়ার্ড প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে সরবরাহ করা হবে। কার্ডগুলো ব্যবহার করা হবে যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে। ভোটগ্রহণ শেষে কার্ডগুলো পৃথকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দেবেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।
ভোট প্রদান: ভোটাররা ভোট প্রদানের জন্য আঙুলের ছাপ/ভোটার নম্বর/জাতীয় পরিচয়পত্র/স্মার্টকার্ড ব্যবহার করে নিজের ভোট দেবেন। এছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ভোটার তার নিজেকে ইভিএমে শনাক্ত করার সুযোগ পাবেন না। এক্ষেত্রে শনাক্ত হওয়ার পর সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোটারকে তিনটি ইলেকট্রনিক ব্যালট পেপার (সিটি নির্বাচনের জন্য তিন পদের জন্য) দেবেন। ব্যালট ইউনিটে ব্যালট পেপার ইস্যু করার পর ভোটার গোপন কক্ষে প্রবেশ করে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটার তার পছন্দের প্রার্থী এবং প্রতীক দেখে তার বাম দিকের বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করবেন। সবুজ রংয়ের বোতাম চেপে ভোট সম্পন্ন করবেন। ভুল হলে দুইবার কেন্সেল করে তৃতীয়বার ভোট দিতে পারবেন।
খুলনা সিটি নির্বাচনে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০৬ নম্বর সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২৩৯ নম্বর জসিম উদ্দিন হোস্টেল (নিচতলা) কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। দু’টি কেন্দ্রের ৪ ও ৬টি ভোটকক্ষে যথাক্রমে ৪টি ও ৬টি ইভিএম ব্যবহার করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম কেন্দ্রটিতে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৯৯ জন। আর দ্বিতীয় কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮৭২ জন।
ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে এরইমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কেউ চাইলে এই মেশিনটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমরা প্রদর্শন করবো। এটি একটি উন্নত মেশিন। যে মেশিন দিয়ে ভোট কারচুপি বা হেকিং সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন। নির্বাচনে মোট ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। ভোটগ্রহণ করা হবে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে।
খুলনা সিটি নির্বাচনে মোট পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে লাঙল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির এসএম শফিকুর রহমান, নৌকা প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কাস্তে প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মিজানুর রহমান বাবু এবং হাত পাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুজ্জাম্মিল হক।
এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন প্রার্থী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৮
ইইউডি/জেডএস