সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয়ভাবে তৈরি ইভিএম বাতিলের ঘোষণা দিয়ে বিদেশ থেকে প্রস্তুত করে উন্নত এ ভোটযন্ত্র আনা হচ্ছে। যে মেশিনে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ভোট পড়েছিল প্রায় ৬১ শতাংশ।
খুসিক নির্বাচনে মঙ্গলবার (১৫ মে) ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০৬ নম্বর সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২৩৯ নম্বর জসিম উদ্দিন হোস্টেল (নিচতলা) কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়। দু’টি কেন্দ্রের চার ও ছয়টি কক্ষে যথাক্রমে চারটি ও ছয়টি ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন।
সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৯৯ জন। আর জসিম উদ্দিন হোস্টেল (নিচতলা) কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮৭৯ জন।
অর্থাৎ এ দু’টি কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৮জন। এর মধ্যে প্রথম কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে ৫২২টি। আর দ্বিতীয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৯৫টি ভোট পড়েছে। অর্থাৎ দুই কেন্দ্রে মোট ১ হাজার ৬১৭ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সেই অনুযায়ী, ইভিএমে ভোট পড়েছে ৫৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।
সেক্ষেত্রে বলাই যায়, রসিকের চেয়ে খুসিক নির্বাচনে সাড়ে ৬ শতাংশ কম ভোট পড়েছে ইভিএমে।
সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ ও জসিম উদ্দিন হোস্টেল (নিচতলা) কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মামুন সরকারের দেওয়া তথ্যমতে, ইভিএমে দেওয়া ভোটের এক হাজার ৬১৭টি ভোটের মধ্যে নৌকা মার্কার প্রার্থী পেয়েছেন ৭৭৭টি ভোট।
আর ধানের শীষে ৭১০টি, লাঙ্গলে ২৪টি, কাস্তে প্রতীকে ১১টি এবং হাতপাখা প্রতীকে ভোট পড়েছে ৭৫টি। এছাড়া ২০জন ভোটার শুধুমাত্র কাউন্সিলর পদে ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আর ১৮ জন জসিম উদ্দিন হোস্টেল কেন্দ্রের ভোটার।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি ইভিএম-এর দাম ২ লাখ টাকার বেশি। আর ১০ ইভিএম ব্যবহার করতে খুলনা সিটি নির্বাচনে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো ব্যয় করা হয়েছে। বিপুল অংকের টাকা ব্যয় করেও ভোটের হার কমে যাওয়া অনেক ব্যর্থতা।
এদিকে ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ নিয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে আগে থেকেই। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় ভোট হোক যন্ত্রে। যদিও ইসি বলেছে, এই ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব নয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, এই যন্ত্রে ভোট কারচুপি একেবারেই সম্ভব নয়। কেউ যদি চায়, তবে তাদের সামনে ইভিএম উপস্থাপন করা হবে।
২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ভোটে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে ইভিএমের প্রচলন করে। ওই সময় বেশকিছু নির্বাচনে এ মেশিন ব্যবহার করে সাফল্যও পাওয়া যায়।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে পরবর্তী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময়। ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সেটির কারণ জানতে ও তা সমাধান করতে পারেনি রকিব কমিশন।
ফলে ওই সময় ইভিএম বাদ দিয়ে নতুন করে ইভিএম প্রস্তুতের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। সেই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় বর্তমান কমিশন বিদেশ থেকে ইভিএম প্রস্তত করে আনছে।
আগের ইভিএমগুলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ছিল। যার দাম ছিল সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৪ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৮
ইইউডি/এমএ