ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

রাসিক নির্বাচনে প্রচারণায় লিটন, নিরব বুলবুল

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৮
রাসিক নির্বাচনে প্রচারণায় লিটন, নিরব বুলবুল রাসিক নির্বাচনে প্রচারণায় লিটন, নিরব বুলবুল

রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের দামামা বেজে গেছে। পাঁচ বছরের মাথায় আবারও গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গন। আগামী ৩০ জুলাই রাসিক নির্বাচন।

মঙ্গলবার (২৯ মে) নির্বাচন কমিশনার ভোটের এই দিন নির্ধারণ করে। তবে রাজশাহীতে এর আগেই সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

তাই এরই মধ্যে আগাম প্রচারণায় ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এই মেয়র।

কিন্তু খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় বিএনপি এখনও নিরব। বর্তমান মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবারও নির্বাচন করতে চান। তবে দল কী সিদ্ধান্ত নেবে, কাকে প্রার্থী করবে, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন বুলবুল। তবে বুলবুলের বাইরে তেমন কোনো নাম শোনা যায়নি এখনও।

তাই বুলবুলের সমর্থকরা প্রার্থিতা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভাবাচ্ছে তাদের। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত এরই মধ্যে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে।

জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসেন স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বেন বলে আগেই খবর উড়িয়েছেন। আর রাজশাহীতে জামায়াতের যে ভোটব্যাংক রয়েছে, নির্বাচনে তা বিএনপির জন্য দুশ্চিন্তার কারণও বটে।

গত ১২ মার্চ দলটির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সিদ্দিককেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে সেটাকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন না দলের নেতারা। তারা বলছেন, কারাগার থেকে ভোট করার ইতিহাস আছে। বরং সহানুভূতিও পাওয়া যায়।

দলটির রাজশাহীর নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশনগুলোতে বারবার আমরা বিএনপিকে ছাড় দিচ্ছি। তাদেরও ছাড় দেওয়া উচিত। আর পাঁচ সিটির মধ্যে ভোটের আনুপাতিক হারে রাজশাহীতেই অনেক শক্তিশালী জামায়াত।

বিএনপি নেতাদের ধারণা, জোটের একক প্রার্থী হলে আবার জয় হবে তাদের। তবে জামায়াতের সিদ্দিক হোসেন প্রার্থী হলে জয় কঠিনও হতে পারে।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমাদের এখনও হয়নি। আমরা চাই জামায়াত প্রার্থী না দিক। কারণ, তারা বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের শরিক। সিটি নির্বাচনটাও আন্দোলনের অংশ। আমরা এই আন্দোলনে জিততে চাই।

মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সিটি নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, সে ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি ঠিকই, তবে কারাবরণের আগে দলের চেয়ারপারসন মেয়র বুলবুলকে সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী বুলবুলকেই আমরা প্রার্থী হিসেবে দেখছি।

মেয়র বুলবুল বলেন, কেন্দ্র থেকে প্রার্থীতার ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। দলের নির্বাহী কমিটির সভা হবে। সে সভাতেই সিদ্ধান্ত হবে, প্রার্থী হবেন কে। আমি সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। তবে সিদ্ধান্ত না হলেও ভোটের প্রস্তুতি রয়েছে আমার।

রাজশাহীতে মেয়র পদে প্রথম ভোট হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। সেবার জিতেছিলেন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু। ২০০২ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনেও জয় পান তিনি। ২০০৮ সালে মিনু কারাগারে থাকায় ভোটে দাঁড়াননি। পরে বিএনপি প্রার্থীতা দেয় সে সময়ের যুবদল নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ওই নির্বাচনে জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর উত্তরের এই মহানগরে প্রথমবারের মতো জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে ২০১৩ সালে আবার লিটনকেই বড় ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন বুলবুল।

এদিকে, ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেও প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন মহানগর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তাকে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) সংসদীয় আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে তিনি মেয়র নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তবে পরে বিএনপির আর সংসদ নির্বাচনে যাওয়া হয়নি।

এবার ভোটের আগে রাজশাহী বিএনপিতে বিভেদ রয়েছে। কয়েক মাস আগে মহানগর শাখায় পছন্দের নেতাদের স্থান দেওয়াকে কেন্দ্র মিনু ও মিলনের সঙ্গে বুলবুলের তৈরি হয়েছে দূরত্ব। দলীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা।

এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন মিলন। তবে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন এখন। বলেছেন, সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে নেই। আর মিজানুর রহমান মিনুও সিটি নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। ফলে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে বুলবুল ছাড়া বিএনপির সম্ভাব্য কারও নাম সামনে আসছে না।

এদিকে, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটনকে ঘোষণা দেন। এরপর থেকে তারা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

ডাবলু বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে কোনো টানাপোড়েন নেই। অনেক আগেই আমাদের প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে। আমরা ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছি। প্রচার-প্রচারণা চলছে। খায়রুজ্জামান লিটনের চার বছর আট মাসের উন্নয়ন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। মহানগর ও জেলাসহ আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তিন মাস ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে লিটনের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন।

এছাড়া ভোটের দিন ঘোষণার পর মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী সিটিতে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ওয়াশিউর রহমান দোলনের নাম ঘোষণা হয়েছে।

ওয়াশিউর জাতীয় যুব সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগরের সভাপতি। রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তিনি প্রার্থীতা ঘোষণা করেন।

রাসিকে শেষ নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। লিটনকে হারিয়ে বুলবুল শপথ নেন ওই বছরেরই ২১ জুলাই। দায়িত্ব পান ১৮ সেপ্টেম্বর। আইনে করপোরেশনের প্রথম সভা থেকে আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোটের বাধ্যবাধকতা আছে। সে অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই ভোট নির্ধারণ করেছে কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৮
এসএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।