হালে আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় ও সম্পদসহ হলফনামার অজানা সব তথ্য। পাঠকের কৌতুহল মেটাতে এর আগে বাংলানিউজ মেয়র প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণ তুলে ধরেছে।
মেয়র প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা, আয়কর রিটার্ন এবং ঢ-ফরম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এবার ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য রাসিক নির্বাচনে নিজ আয় থেকে নির্বাচনী খরচ বহন করবেন আওয়ামী লীগের হাই ভোল্ডেজ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আর নিজের সামর্থ্য থাকলেও ঋণ নিয়ে নির্বাচন করবেন বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এর মধ্যে তার শ্যালক ও বাইরের একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি কিছু অর্থ নিজ আয় থেকে ব্যয় দেখানো হয়েছে।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত রাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটনের বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। সেবার তিনি সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছিলেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০১৩ সালের বার্ষিক আয় ৫৮ হাজার টাকা। সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ১৫ লাখ টাকা দেখান লিটন। নিজের ৩ লাখ এবং নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শামসুজ্জামানের কাছ থেকে আসা ১২ লাখ টাকা সেবার ব্যয় করেন তিনি।
আর এবার তার আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামেই জমা আছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ৪০৮ টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার ও নির্ভরশীলদের নামে ২৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা রাখা আছে। স্ত্রীর নামে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ও মেয়েদের নামে ২০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আছে লিটনের। এবার লিটনের সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
পুরো টাকাই তিনি নিজ তহবিল থেকে খরচ করবেন। এর মধ্যে কেবল কর্মীদের জন্য খরচ করবেন ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। এছাড়া নির্বাচনী ক্যাম্পে ২০ হাজার, কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে ১৮ হাজার, পোস্টারে ২ লাখ ৭৯ হাজার, ঘরোয়া বৈঠকে ৬০ হাজার, লিফলেটে ৮০ হাজার, হ্যান্ডবিলে সোয়া ৩ লাখ, ডিজিটাল ব্যানারে ১ লাখ ৬০ হাজার, ১০টি পথসভায় ১৪ হাজার, মাইকিংয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮শ’, প্রতীকে ১ লাখ ২০ হাজার এবং আপ্যায়নে ৩৬ হাজার ও যাতায়াতে ৪৮ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
অপরদিকে নিট সম্পদ ও আয়ে ছুঁতে না পারলেও নির্বাচনী ব্যয়ে লিটনের সমান খরচ করবেন বিএনপির মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তিনিও খরচ করবেন ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার নিজ তহবিল থেকে আসবে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া ৫ লাখ টাকা স্ত্রীর ভাই বজলুর রহমান এবং ৫ লাখ টাকা জাফর ইমাম দেবেন। বুলবুলের এবারের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে-পোস্টারে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫শ’, নির্বাচনী ক্যাম্পে ১ লাখ ২০ হাজার, কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে ৬০ হাজার, যাতায়াতে ৭০ হাজার, প্রতীকে ৫শ’, অফিস আপ্যায়নে ২৪ হাজার, ৩০টি পথ সভায় ১৫ হাজার, মাইকিংয়ে ৬৪ হাজার, লিফলেটে ২ লাখ ৭৫ হাজার, হ্যান্ডবিলে ১ লাখ ৮০ হাজার, ব্যানারে ১ লাখ ২২ হাজার এবং ডিজিটাল ব্যানারে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। কর্মীদের পেছনে খরচ নেই বুলবুলের!
বুলবুলের এবারের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ২৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। তার নিজের ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮শ’ টাকা নগদ রয়েছে। স্ত্রীর নামে না থাকলেও বুলবুলের নামে ব্যাংকে জমা দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬১২ টাকা। ২০০৮ সালে ১ লাখ ৬৮ হাজার এবং ২০১৩ সালে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা বার্ষিক আয় দেখান বুলবুল।
এদিকে, রাসিকের অপর মেয়র প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা শফিকুল ইসলামের নির্বাচনী ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। এর মধ্যে তার নিজের ব্যয় ৩০ হাজার। জন ও পরিচিতদের কাছ থেকে নেবেন ৬০ হাজার টাকা। আর কর্মীদের স্বেচ্ছায় দান থেকে আসবে ৮০ হাজার টাকা।
এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমানের বার্ষিক আয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার নামে নগদ টাকা ২৫ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ৩০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। তবে হাবিবুর নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় করবেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার নিজের ২৫ হাজার। বাকি অর্থ আসবে স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী গণসংহতি আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ তার নির্বাচনী ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেছেন ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে নিজ আয় থেকে ১০ হাজার টাকা এবং বাবা ও স্ত্রীর কাছ থেকে ২ লাখ, জনৈক আবুল হাসানের কাছ থেকে ১ লাখ, রিসাদ বিন আবদুস সালামের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও গণসহায়তা থেকে ২ লাখ টাকা আসবে বলে উল্লেখ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ।
এদিকে, নির্বাচনী ব্যয় সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, প্রার্থীদের নিট সম্পদ সমান না হওয়ায় নির্বাচনে লেবেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সামর্থ্য অনুযায়ী প্রার্থীরা নির্বাচনে ব্যয় করবেন। এ কারণে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় ভিন্নতা থাকবে। যদিও সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা নির্ধারণ রয়েছে। তবে সরকারি সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে লেবেল প্লেইং ফিল্ড থাকবে। সমভাবে আইন প্রয়োগে প্রয়োজনীয় নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিচ্ছে। গত ৩০ জুন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিয়কালে নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৮
এসএস/আরআর