ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বুলবুলের মাথায় ১২ মামলা, কাউন্সিলর দৌড়ে মাদক ব্যবসায়ীও 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৮
বুলবুলের মাথায় ১২ মামলা, কাউন্সিলর দৌড়ে মাদক ব্যবসায়ীও 

রাজশাহী: ২০১৬ সালে রাজশাহীর আলোচিত পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ সরকার হত্যা ও বিস্ফোরকসহ ১২ মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে এবার রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। 

এর মধ্যে চারটি মামলা স্থগিত করেছেন উচ্চাদালত। বাকি আটটি মামলা বিচারাধীন।

এসব মামলায় জামিনে রয়েছেন সদ্য বিদায়ী এই মেয়র।

নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় এসব মামলার তথ্য তুলে ধরেছেন। শুধু তাই নয়, এবার রাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদের প্রার্থী তালিকায় উঠে এসেছে মাদক ব্যবসায়ীর নামও।

হলফনামায় ফৌজদারি মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নামে পুলিশ হত্যাসহ মোট ১২টি মামলা রয়েছে। এসব মামলাগুলোর মধ্যে কেবল রাজশাহী মহানগরীর চার থানাতেই রয়েছে ৯টি।

তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নামে ৯৬ সালে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় দুইটি ফৌজদারি মামলা ছিল। যা রাষ্ট্র প্রত্যাহার করেছে  বলে খায়রুজ্জামান লিটনের হলফনামায় উল্লেখ রয়েছে।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনে দেওয়া বুলবুলের হলফনামা থেকে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে হত্যা ও নাশকতার অভিযোগ ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মোট ১২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ সরকার হত্যা, বিস্ফোরকদ্রব্য ও নাশকতার মামলা অন্যতম।

এর মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ সরকার হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে তিনি কারাবাসেও ছিলেন। বাকি মামলাগুলো বিচারাধীন।  

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশের পরিদর্শক নূর হোসেন খন্দকার এজাহারনামীয় ৯০ জন আসামির মধ্যে তদন্ত সাপক্ষে ৮৮ জনকে অভিযুক্ত করেন। বাকি দু’জনের নাম-পরিচয়ে মিল না থাকায় তাদের চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়।  

তদন্তে এজাহারনামীয় আসামির বাইরে আরও একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ জনে। পরে এই মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমানের নামে রয়েছে একটি মামলা। বুলবুলের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা দায়ের করা হয়েছে সবগুলোই রাজশাহীর থানা ও আদালতে।  

হাবিবুর রহমানের নামে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারণার মামলা রয়েছে। যা এখনও বিচারাধীন।

অপরদিকে গণসংহতি আন্দোলনের রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শফিকুল ইসলামের নামে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। তারা দু'জনই রাসিক নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী।

তবে কেবল বুলবুলই নয় এবার বিএনপি থেকে যেসব কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন করছেন তাদের বেশিরভাগেরই বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে। অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে নাশকতার অভিযোগ একাধিক মামলা। নাশকতা মামলায় বিএনপির বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর জেলও খেটেছেন।  

এদিকে বিএনপির সরকার পতনের ডাক দিয়ে কর্মসূচি পালনকালে পেট্রোল বোমা দিয়ে গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এসব মামলা করা হয়।  

মামলায় কাউন্সিলর আনোয়ারুল আজব আজীম, প্যানেল মেয়র ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মোসাম্মাৎ নুরুন্নাহারসহ বেশ কিছু কাউন্সিলর কারাবাস করেছেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ অনেক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে নগরীর ৪ থানায় ৯টি রয়েছে। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। এরই মধ্যে অনেক মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তবে মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আপাতত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি নেই।  

রাজশাহী সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রার্থীদের মামলা থাকলে কোনো সমস্যা নেই। তবে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে যদি কোনো মামলায় আদালত থেকে ওয়ারেন্ট জারি থাকে তবে সেক্ষেত্রে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে।  

তিনি জানান, মেয়র বা কাউন্সিলর পদে যারা এবার অংশ নিচ্ছে তাদের হলফনামা পুলিশ দিয়ে তদন্ত করে নেওয়া হয়েছে। যেসব প্রার্থী হলফনামায় মামলার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তাদের মামলাগুলোর অবস্থাও খতিয়ে দেখা হয়েছে।

তবে রাসিক নির্বাচনে এবার সাধারণ কাউন্সিলর পদে এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী প্রার্থী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশনও তার মনোনয়নপত্র বৈধ বলেও ঘোষণা দিয়েছে।  

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ধরনের ব্যক্তি কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হবে।

রাসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম জহিরুল ইসলাম। তিনি ওই ওয়ার্ডের চণ্ডিপুর এলাকার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ জহিরুল ও তার এক সহযোগীকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, চার রাউন্ড গুলি ও ১২ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে।  

নগরীর হড়গ্রাম এলাকায় গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক যুবককে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছিল। এ ঘটনায় জহিরুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে আটক আছেন।  

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের শাস্তিস্বরূপ জহিরুলকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসন্ন সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদের প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। তার নামে মোট ছ’টি মামলা আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান বলেন, মামলা থাকলেও আইনে প্রার্থিতার সুযোগ রয়েছে। তবে কোনো মামলায় দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড হয়ে থাকলে তার প্রার্থিতার সুযোগ নেই। আর যথাযথ নিয়ম মেনে তিনি মনোনয়নপত্র তুলেছেন।  

বিধি অনুযায়ী জহিরুল প্রার্থিতার সুযোগ পাচ্ছেন বলেও জানান এই নির্বাচন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৮
এসএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।