কী করেছেন, আর নির্বাচিত হলে কী করতে চান; নিজেকে স্বপ্নশ্রমিক দাবি করে প্রচারণায় নেমে সেসব কথারই ফিরিস্তি তুলে ধরছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আর অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ আর শরিক দল জামায়াতের অসযোগিতা নিয়ে তালগোলে থাকা মোসাদ্দেক বুলবুল বলছেন, কারান্তরীণ খালেদার মুক্তির কথা।
অনুষ্ঠেয় রাসিক নির্বাচনকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবেই দেখছেন বুলবুল ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফলে উন্নয়নের পথে থাকবেন না খালেদার মুক্তির আন্দোলনে শরিক হবেন তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
অন্যদিকে প্রতীক পাওয়ার পরপর মঙ্গলবার (১০ জুলাই) ১৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন নৌকার মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ১১ পাতার নির্বাচনী ইশতেহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কর্মসংস্থানের। এছাড়া মোট ৮১টি পয়েন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ানো, তরুণদের জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া, সড়ক, অবকাঠামো উন্নয়ন, তার সময়ে নেওয়া বড় প্রকল্পগুলো শেষ করা, আয় বাড়াতে নতুন প্রকল্পসহ ১৫ দফা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন লিটন।
এরই মধ্যে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ ১৪ দলের শরিক দলগুলো সভা করেছে। ওই সভায় নৌকার প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের জয় সুনিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য জোটের সমন্বয়ক হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্য সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন বাদশা।
তবে লিটন ইস্যুতে রাজশাহীতে ১৪ দলীয় নেতারা একাট্টা হলেও প্রতিপক্ষ শিবিরে তা এখনও অদৃশ্য। বুলবুলের পক্ষে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম দল জামায়াত ইসলামী শেষ পর্যন্ত তাদের প্রার্থী দেয়নি ঠিকই। কিন্তু সমর্থনও জানায়নি। প্রার্থী দেওয়া নিয়ে জোর গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত হাইকমান্ডের নির্দেশে সেখান থেকে সরে আসে যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও নির্বাচনী প্রাচারণায় এখন পর্যন্ত বুলবুলের পক্ষে মাঠে নামেনি।
সিটি নির্বাচন ঘিরে কয়েক মাস আগেই মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ছিদ্দিক হোসেনকে মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করেছিল জামায়াত ইসলামী। মহানগরের প্রতিটি এলাকায় রঙিন পোস্টার, লিফলেটও লাগিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়নপত্র তোলেননি। তবে জোটের শরিক দল বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকেও আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেয়নি দলটি।
কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দিলেই শুধু বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন জানাবে স্থানীয় জামায়াত। তবে এক সময়ের সুসংগঠিত জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভঙ্গুর। মহানগর সেক্রেটারিসহ নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ সদস্যই নাশকতার মামলায় এখন কারাবন্দি। যারা বাইরে আছেন, তারাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কাজেই দলটির সমর্থন নিয়ে বিএনপির কতটা লাভ হবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
তবে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আগ থেকেই নানা প্রতিশ্রতি দিয়ে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। ফলে সবদিকের আশ্বাসে এখন যেন হাতে আকাশ পেয়েছেন লিটন।
জানতে চাইলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তার সময় ছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের স্বর্ণযুগ। ওই সময় রাজশাহীর যা উন্নয়ন হয়েছে তা আর কারও আমলে হয়নি। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি জয়ী হলে এতদিনে রাজশাহী আধুনিক নগরী হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেত। কিন্তু গত পাঁচ বছরে রাজশাহীর কোনও উন্নয়ন হয়নি। তাই মানুষ আর ভুল করবে না উন্নয়নের ধারা ফিরিয়ে আনতে এবার নৌকায় ভোট দেবেন। নির্বাচিত হলে রাজশাহী হবে ‘মেগা সিটি’ বলেন লিটন।
অপরদিকে সদ্য বিদায়ী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, মামলা দিয়ে তাকে গত মেয়াদের অর্ধেকের বেশি সময়ই নগর ভবনের বাইরে রেখে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। গত পাঁচ বছরে রাজশাহী সিটির মেয়র থাকার সময়ে তিনি মাত্র ২৬ মাস কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে ১২টি মামলা দেওয়া হয়েছে। যেগুলোর ৮টি চলমান চারটি স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। হাজতেও থাকতে হয়েছে প্রায় সাত মাস। দু’বার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। রাজশাহীর মানুষ এসবের সাক্ষী। ভোটারদের কাছে এটা পরিষ্কার, সুযোগ পেলে তিনি রাজশাহীর উন্নয়ন করবেন।
বুলবুল বলেন, বর্তমানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা না গেলে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যাবে না। এর পরও তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কারণ দলীয়ভাবে এ নির্বাচনকে তারা কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নিয়েছেন।
জামায়াতের সমর্থন বিষয়ে জানতে চাইলে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘তাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি বলে শুনেছি। সিদ্ধান্ত পেলে শরিক দল জামায়াতও মাঠে নামবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৮
এসএস/ওএইচ/