প্রার্থীদের গণসংযোগের পাশাপাশি পুরো শহর জড়ে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীদের পাশাপাশি সমর্থক ও প্রতিনিধিরাও যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
তবে এবারের নির্বাচনে কাউন্সিলরদের পাশাপাশি মেয়র প্রার্থীদের ভাবনায় জায়গা করে নিয়েছেন নতুন ভোটাররা। যারমধ্যে অধিকাংশ ভোটারই তরুণ বলে ধরে নিয়েছেন প্রার্থীরা। তাই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে শিশু ও নারীদের পাশে তরুণদের জন্য আলাদা হিসাব-নিকাশ কষতে হচ্ছে তাদের। কারণ এ ভোটাররাই পারে নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়ে যে কারো পাল্লা ভারী করে দিতে।
এরইমধ্যে তরুণদের নিয়ে নানান পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ অধিকাংশ প্রার্থীরা। আবার নতুন ভোটার অর্থাৎ তরুণরাও কষছেন নানান হিসাব-নিকাশ।
বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বাংলানিউজ বলেন, এই নির্বাচনে প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছি। সেই হিসেবে ভেবে-চিন্তে ভোট দেয়ার ইচ্ছে রয়েছে।
ভোটের ক্ষেত্রে সবার কাছে তরুণ নেতৃত্বই প্রধান্য বেশি পাবে বলে জানিয়ে এ শিক্ষার্থী বলেন, যে তরুণদের ভাবনা বুঝবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করবে এবং মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত একটি সুন্দর-পরিপাটি বাসযোগ্য নগর গড়ে দিবে, তাকেই ভোট দেয়া যেতে পারে।
তাসলিমা নামের অপর এক কলেজছাত্রী বলেন, বর্তমান সমাজে মাদকের ভয়াবহতা বেড়েছে। আবার নানান ধরনের সন্ত্রাসের পাশাপাশি আধুনিক এ সমাজেও ইভটিজিং, ধর্ষণ, যৌতুক, নারী নির্যাতন, বাল্যবিয়ের মতো কর্মকাণ্ড অহরহ পরিচালিত হয়। আর এসব সমস্যায় বেশি জড়িয়ে পড়ছে তরুণ সমাজ। তাই তরুণদের এসবের কালো থাবা থেকে বেরিয়ে আসতে যে সহয়তা করবে, নারীদের চলার পথ নিরাপদ রাখবে তাকেই ভোট দিবো।
তরুণ প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, দেশ এখন ডিজিটালাইজেশনের পথ দিয়ে হাঁটছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের সহায়ক হিসেবে নগর পিতাকেও হাঁটতে হবে। আর সেই পথ ধরে তরুণদরে আগামীর ভবিষ্যত সুন্দরভাবে গড়তে যে সহায়তা করবে তাকেই আমি ভোট দিবো।
বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচেন বরিশালে মোট ভোটার ছিলো ২ লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন। তবে এবারে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে ৩০ হাজার ৯০৯ জন ভোটার বেড়ে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। আর বাড়তি ভোটারের মধ্যে ১৩ হাজার ৮১১ জন পুরুষ ও ১৭ হাজার ৯৮ জন নারী রয়েছে।
নতুন এ ভোটারদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, নতুন বা তরুণ ভোটারদের জন্য ইতিমধ্যে আমি একটি মেসেজ দিয়ে দিয়েছি। তাতে বেশ সাড়া পেয়েছি ইতিমধ্যে। আমি বলেছি তরুণদের কর্মসংস্থান ও মাদক থেকে সরিয়ে আনার জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন আমি করবো।
গত কয়েক বছরে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই যুবনেতা বলেন, বিগত ৪/৫ বছর ধরে তরুণ সমাজের সঙ্গে আমি আছি, নির্বাচনেও তারা আমার সঙ্গে কাজ করছে। আমি আশাবাদী তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করবে।
আর নতুন ভোটারদের বিষয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার বলেন, তরুণ ও নতুন ভোটাররা কি চাচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের বিশেষ খেয়াল রয়েছে। সাধারণ নগরবাসীর পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের স্বার্থে যুগোপযোগী আধুনিক নগরী গড়ে তোলা হবে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পাশাপাশি মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নগরী গড়ে তোলার আকাঙ্খার কথা আমি আগেই প্রকাশ করেছি।
সর্বকনিষ্ঠ (তরুণ) ও একমাত্র নারী মেয়র প্রার্থী বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, তরুণরা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমরা গরীব মেহেনতি মানুষের পাশাপাশি তরুণদের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। যুবসমাজকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে পাড়ায় পাড়ায় পাঠশালা তৈরির পাশাপাশি বেশকিছু পদক্ষেপের কথা আমি বলেছি।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, নতুন ও তরুণ ভোটারদের মানসিক বিকাশের জন্য আধুনিক নগরী হবে বরিশাল। যুবসমাজের জন্য একটি কাউন্সেলিং সেন্টার তৈরির পাশাপাশি বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। যুবকদের আইটিতে অভিজ্ঞ করে তোলার ইচ্ছেও আমার রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
এমএস/এসএইচ