সম্প্রতি খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিছু কিছু অনিয়মে বিদেশি কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।
সমালোচকদের দাবি, নির্বাচন বাংলাদেশের একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন ধারাবাহিকভাবেই বিদেশী কূটনীতিকরা পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা সব সময়ই চাইছেন, সব নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু , অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হয়।
আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করোপরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই নির্বাচনে ইতোমধ্যে দৃষ্টি রাখতে শুরু করেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সরকারের প্রতি এই আহ্বানও জানিয়েছেন তাদের অনেকেই ।
গত শনিবার (১৪ জুলাই) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।
ওই বৈঠকের পর বার্নিকাট আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যতটা সম্ভব অনিয়মমুক্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশ সরকার যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজন করে এটাই আশা করে যুক্তরাষ্ট্র।
ওই বৈঠকে মার্শা বার্নিকাট গাজীপুরের নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হয়েছে বলে জানান। এছাড়া গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনগুলো যতোটা সম্ভব অনিয়মমুক্ত করার জন্য সরকারের অবস্থান কি সেটাও জানতে চান বার্নিকাট।
অবশ্য বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে জানানো হয়েছে মার্শা বার্নিকাটকে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত এর আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশেরই প্রতিফলন ঘটে থাকে জাতীয় নির্বাচনে। তাই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে বাংলাদেশের প্রতিটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হওয়ার প্রত্যাশা করেছে যুক্তরাজ্যও। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেছেন, আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট-ই শুধু নয়, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াই শান্তিপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের সবস্তরের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার প্রত্যাশা করেন।
প্রতিটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন বিদেশি কূটনীতিকরা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেন। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনও বিদেশি কূটনীতিকরা পর্যবেক্ষণ করবেন। এবারের তিন সিটি করপোরেশনে বেশিরভাগ কূটনীতিক মাঠপর্যায়ে গিয়ে সরাসরি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে না থাকলেও নির্বাচনের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন তারা।
আবার কোনো কোনো দেশের কূটনীতিকরা সরাসরি মাঠ পর্যায়ে গিয়েও নির্বাচন পরিস্থিতি দেখবেন বলে কূটনীতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এর আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বিদেশি কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকদের সরব উপস্থিতি ছিল। এসব নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা ছাড়াও ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জার্মানি ইত্যাদি দেশের কূটনীতিকরা মাঠপর্যায়ে থেকে নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এবারের নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে এখন থেকেই দৃষ্টি রাখছেন বিদেশি কূটনীতিকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
টিআর/এমএ