ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বৃষ্টিতে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে ছাপাখানা মালিকদের

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
বৃষ্টিতে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে ছাপাখানা মালিকদের নগরীর পথ-ঘাটে টানানো দড়িগুলো প্রায় পোস্টার শূন্য, ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: টানা দাবদাহের পর অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি শুরু হয়েছে রাজশাহীতে। গত কয়েকদিন আগুনমুখো রোদের দাপট থাকলেও এখন ঝরছে বৃষ্টি। এতে জ্বলতে থাকা বিবর্ণ প্রকৃতি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রাণ ফিরে এসেছে। তবে কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠছে প্রার্থীদের। দফায় দফায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে নির্বাচনী পোস্টার মাটিতে গলে পড়ছে। পলিথিন মুড়িয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না! তাই নতুন পোস্টার ছাপাতে আবারও ব্যস্ততা বেড়েছে নগরীর ছাপাখানা পাড়ায়। ফলে এবার ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে ছাপাখানা মালিকদের।

একদিন আগেও পদ্মাপাড়ে রাজশাহী ছিলো পোস্টারের নগরী। প্রধান সড়ক থেকে পাড়ার অলি-গলি, এমনকি ব্যস্ততম সড়কের বাতাসেও ভাসছিল মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাদা-কালো পোস্টার।

যেদিকে চোখ পড়তো সেখানেই দেখা যেত অসংখ্য নির্বাচনী পোস্টার।

কিন্তু রোববার (২২ জুলাই) সকাল থেকে সোমবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে হওয়া হালকা ও মাঝারি বর্ষণে অধিকাংশ পোস্টারই গলে পড়েছে। ফলে পথ-ঘাটে টানানো দড়িগুলো প্রায় পোস্টার শূন্য হয়ে পড়েছে। এতে রাজশাহীর মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ছেদ ঘটেছে। বাড়তি খরচ দিয়ে আবারও পোস্টার টানাতে হবে তাদের।

সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট, মালোপাড়া, বাটার মোড়, রানীবাজার, অলোকার মোড়, নিউমার্কেট, সুলতানাবাদ, ষষ্টিতলা, গৌরাঙ্গা রেলগেট, কাদিরগঞ্জ গ্রেটাররোড, লক্ষ্মীপুর, সিঅ্যান্ডবি মোড়, সপুরা, শালবাগান ও নওদাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক এবং পাড়া-মহল্লায় গিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে। চোখে পড়ার মতো পোস্টারের সেই আধিক্য এসব এলাকায় আর নেই।

এদিকে, মেয়র পদে নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকা পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলামের পোস্টার একটু ব্যতিক্রমী। তার পোস্টারে তিনি নিজের ও দলীয় প্রধানের কোনো ছবি ব্যবহার করছেন না। তার নির্বাচনী প্রতীক হচ্ছে হাত পাখা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে পোস্টারে ছবি দিতে নিষেধ আছে। তবে এটা নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি করেন।

এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে মাঠে থাকা চার প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন- নৌকা, বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল-ধানের শীষ, গণসংহতি আন্দোলন সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ- হাতি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান- কাঁঠাল প্রতীক দিয়ে তাদের পোস্টার, হ্যান্ডবিলসহ নির্বাচনী প্রচারণার ব্যানার, ফেস্টুন করেছেন এবার।

এছাড়া নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রতীক করাত, ঠেলাগাড়ী, রেডিও, এয়ার কন্ডিশনার, ঝুড়ি, বেহালা, মিষ্টি কুমড়ার, লাটিম, ট্রাক্টর ও স্টিল আলমারিসহ কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রতীকের পোস্টার ছিল নগরীর আনাচে-কানাচে, অলিতে-গলিতে, খোলা বাজারে টানানো। বৃষ্টির পর এখন সেসব স্থানে টানানো শূন্য দড়ি ঝুলছে।

তবে দুই মেয়র প্রার্থীর লিটন ও বুলবুলের কিছু পোস্টার পলিথিনে মোড়ানো থাকার কারণে সেগুলো অক্ষত অবস্থায় এখনও ঝুলছে।
চলছে নতুন করে পোস্টার চাপানোর কাজ, ছবি: বাংলানিউজ
রাসিকের ১৯নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুজ্জামান টিটো বলেন, বৃষ্টির পর পোস্টারের এ দুরবস্থার কথা বিভিন্ন এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত জানাচ্ছেন। এরই মধ্যে তার নির্দেশে নতুন করে পোস্টার ছাপা শুরু হয়েছে। বৃষ্টি কমলেই আবারও পোস্টার ঝোলানো হবে।

রাজশাহী নিউমার্কেট সংলগ্ন এলাকায় থাকা ছাপাখানা পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সামান্য বিরতি দিয়ে প্রতিটি ছাপাখানায় ধুমসে পোস্টার ছাপানোর কাজ চলছে। বৃষ্টির কারণে আগের প্রার্থীরাই আসছেন। তাই নতুন করে আর ডিজাইন করতে হচ্ছে না। কেবল ছাপার কাজ চলছে।

নিউমার্কেট গৌরহাঙ্গা এলাকার বিকল্প অফসেট প্রেসের স্বত্ত্বাধিকারী নওশের আলী বলেন, তার ওখানে মূলত নৌকার পোস্টার ও হ্যান্ডবিল ছাপা হয়েছে। এখন মেয়র প্রার্থীর চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদেরই ভিড় বেশি। ফলে প্রেস মালিকদের ব্যবসা ও ব্যস্ততা দুটোই আবার বেড়েছে।

নিউমার্কেটের পূর্বপাশে নন্দিতা প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী শফিকুল ইসলাম জানান, ৩০ জুলাই নির্বাচন। এ অবস্থায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় প্রার্থীদের অনেককে আবারও নতুন করে পোস্টার ছাপাতে হচ্ছে। এতে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। ২৮ জুলাই পর্যন্ত তাদের কাজের চাপ রয়েছে।

নগরীর নিউমার্কেট উপহার সিনেমা হল এলাকার মতিন লেমিনেশন হাউজে গিয়ে দেখা যায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রতীকের পোস্টার লেমিনেটিং করা হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তাদের কাজ আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শহীদুল ইসলাম জানান, এ সময় বৃষ্টি স্বাভাবিক। তবে রাজশাহীতে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছ না। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও মাঝারি বর্ষণ হচ্ছে। তাই রোববার থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও পরিমাণ কম।

জানতে চাইলে শহীদুল ইসলাম বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১১ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আকাশে মেঘ আছে, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
এসএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।