ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কাজেই বেঁচে আছেন হিরণ

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
কাজেই বেঁচে আছেন হিরণ বরিশালের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত বিবির পুকুরপাড়, ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল থেকে: মানুষ যে কৃত কর্মের মাঝে সারাজীবন অমর হয়ে থাকে তার বাস্তব প্রমাণ বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নিজ দলের প্রার্থী তো আছেই, বিরোধী দলের প্রার্থীও হিরণের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

হিরণকে আধুনিক বরিশালের রূপকার বলা হয়। বরিশাল সিটিতে যা কিছু হয়েছে সবই তার হাত ধরে।

এখানকার রাস্তাঘাট, পার্ক, মসজিদ, মাদ্রাসা, খেলার মাঠ, শিশুপার্ক সবকিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে গেছেন তিনি। তাইতো তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার মুখে তার নাম। অনেকে বলছেন হিরণ যা করে গেছেন আগামী ১শ’ বছরেও তা অন্য কেউ করতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। আবার কেউ বলছেন, সোনা দিয়া বান্দাইয়া রাখলেও সবার আগে হিরণের নাম আসবে।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও বিএনপির অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের মধ্যেই।

সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ইশতেহার ঘোষণা করেননি। তবে তার প্রচারণায় স্থান পেয়েছে প্রয়াত মেয়র হিরণের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা।

অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারও হিরণের ভালো কাজের স্বীকৃতি দিয়ে বলছেন, তিনি অনেক কাজ করে গেছেন। তবে আমিও আমার সময়কালে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যা শেষ করতে পারিনি সেগুলো করবো। এছাড়া নতুন মহানগরী উপহার দেব।
বরিশাল নগরের পরিচ্ছন্ন রাস্তা-ঘাট, ছবি: বাংলানিউজ
যদিও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র। তবে তার অতীত কাজ খুব একটা দাগ কাটেনি নগরবাসীর মনে। এমনকি বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালের কর্মও মনে ধরার মতো না।

বরং কামালের কর্মে বিএনপির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার সময়ে বরিশাল সিটিতে উন্নয়ন বলতে কিছু হয়নি। উল্টো রাস্তাঘাট, ড্রেন, নর্দমা, পুকুর, পার্ক সব ময়লা-অাবর্জনায় ভরে গেছে। প্রয়াত হিরণ বরিশালের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত বিবির পুকুরপাড়টাকে করেছিলেন দৃষ্টিনন্দন। সেই বিবির পুকুরপাড়ে এখন আর রঙিন বাতি জ্বলে না। ফোয়ারাও চলে না। পানিতে অাবর্জনার স্তূপ। এগুলো কেউ তদারকি করেনি।

বিএনপি নেতাকর্মীরা একটা কথা বলেই দায় সাড়ছেন আমাদের দল ক্ষমতায় ছিল না, তাই কাজ করতে চাইলেও পারিনি।

বরিশাল নগরের পরিচ্ছন্ন রাস্তা-ঘাট, ছবি: বাংলানিউজকিন্তু অন্য কথা বলছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন নেগাবান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র কামাল কি করছেন? তিনি আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দোহাই দেন। কিন্তু তার বার্ষিক উন্নয়নখাতের বরাদ্দ দেখলেই প্রতীয়মান হবে। নগরের কাজ না হলেও তার ছেলের কাজ ঠিকই হয়েছে। তার সময়ে সব ঠিকাদারি তার ছেলেই নিয়ন্ত্রণ করেছে। কাজেই অজুহাত দেখিয়ে লাভ নেই।

হিরণের কাজ সম্পর্কে সরকারি বরিশাল কলেজের ছাত্র সাব্বির হোসেন জানান, মেয়র হিরণ যা করেছেন তা আর কেউ করতে পারেনি, পারবেও না। কারণ উনি সবার কাছে যেতেন, সবাইকে আপন করে নিতেন। অন্যদের মধ্যে সেই গুণ নেই।

শওকত হোসেন হিরণ ২০০৮ সালের ৪ অাগস্ট বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন সান্টুকে পরাজিত করে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে তিনি বিজয় লাভ করেন। এরপর ২০১৩ সালের ১৫ জুন দ্বিতীয়বার বিএনপি দলীয় প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন তিনি। সেখানেই থেমে থাকেনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বরিশাল সদর অাসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালকও ছিলেন। একই বছরের ৯ এপ্রিল সকাল সাতটায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাত্র ৫৮ বছর বয়সী অাধুনিক বরিশাল সিটির রূপকার শওকত হোসেন হিরণ ১৯৫৬ সালের ১৫ অক্টোবর এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
এসএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নির্বাচন ও ইসি এর সর্বশেষ