ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বিসিসি নির্বাচনে ফেসবুকেও সমানতালে প্রচারণা

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
বিসিসি নির্বাচনে ফেসবুকেও সমানতালে প্রচারণা বিসিসি নির্বাচনে ফেসবুকে প্রচারণা

বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনকে ঘিরে চলছে জোর প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন মাঠঘাট, ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। তবে প্রত্যক্ষ প্রচারণার বাইরে ভোটার আকৃষ্টে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে প্রার্থীরা আশ্রয় নিচ্ছেন বিভিন্ন ‘কৌশল’র। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দে এগিয়ে ফেসবুক।

প্রার্থীদের সামাজিকমাধ্যম থেকে জানা যায়, নির্বাচনী মাঠে তারা দৈনন্দিন যেসব কর্মকাণ্ড করছেন তা ফেসবুকে কখনো স্থিরচিত্র, কখনোবা ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে ডিজিটাল ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন। আবার প্রার্থীরা শহরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রার্থীর নিজের ইচ্ছা-পরিকল্পনার কথাও ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

এতে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে।

এরইমধ্যে ফেসবুক ঘিরে এমন প্রচারণা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  

তথ্যানুযায়ী, বরিশালে ফেসবুকে প্রচার-প্রচরণার ধারা শুরু হয় ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ২০১৮ সালের বরিশাল সিটি করপোরশেন নির্বাচনে ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণার বিষয়টি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

শুরুর দিকে (তিন সপ্তাহ আগে) সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ একটি ডকুমেন্টারি বা অনেকটা প্রোমো ভিডিওর মতো একটি ভিডিও প্রচার করেন তার ফেসবুক পেজে। ‘সমৃদ্ধির পথে আগামীর বরিশাল’ শিরোনামের ওই ভিডিওতে বরিশালের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনার কথা যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন তার পরিকল্পনার কথা। পাশাপাশি ভিডিওর শেষ বার্তা হচ্ছে নৌকা প্রতীকের জন্য ভোট। মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) সকাল ৭টা পর্যন্ত ভিডিওটি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নামের পেজ থেকে দেখা হয়েছে ৪ লাখ ৪৫ হাজার বার। শেয়ার হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি। আর লাইকসহ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া পড়েছে ১৮ হাজার। বিসিসি নির্বাচনে ফেসবুকে প্রচারণাঅপরদিকে দুই সপ্তাহ আগে একই চিন্তাভাবনা রেখে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন (তাপস) একটি ভিডিও আপলোড করেছেন। শুধু তার পেজ থেকেই ভিডিওটি বর্তমানে ১৮ হাজার বার দেখা হয়েছে, একশ’বার শেয়ার হয়েছে, আর দেড় হাজারের বেশি লাইকসহ পড়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

গত শুক্রবার বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরওয়ারের নামের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। যেখানে মজিবর রহমান সরওয়ারের রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি নিজ কণ্ঠে তিনি নগরবাসীর পুনরায় সেবা করার সুযোগও চেয়েছেন। এই ভিডিওটি ২৮ হাজারবার দেখা হয়েছে, ৩৯৭ বার শেয়ার হয়েছে এবং প্রায় আড়াই হাজার লাইকসহ প্রতিক্রিয়া পড়েছে।

এছাড়া বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী তার নিজ ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা ও বিজয়ী হলে কেমন উন্নয়ন করতে চান এ বিষয় নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করে আপলোড করেছেন। যার কোনোটি এক মিনিট, আবার কোনোটি ৪/৫ মিনিটের।

ভিডিও ছাড়াও কর্মী-সমর্থকরা প্রার্থীর উঠান বৈঠক, পথসভার স্থির ও ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যেখানেও লাইক, কমেন্টের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। যা নিয়ে যুবকদের পাশাপাশি বয়োজ্যেষ্ঠদেরও বেশ আগ্রহ রয়েছে।  

নগরের দক্ষিণ আলোকান্দার বাসিন্দা মশিউর রহমান জানান, ভিডিওগুলো রুচিশীলতার পরিচয় দিচ্ছে প্রার্থীদের। আবার প্রার্থী তাদের মনের ইচ্ছে-ভাবনার কথা একবারে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সারাদিন গণসংযোগ করেও হয়তো গুছিয়েও বার বার এ কথাগুলো বলা যেতো না।

সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের ছাত্র রোমন বলেন, আধুনিক যুগে সবাই ফেসবুকে বুঁদ। তাই প্রার্থীরা এই মাধ্যমকে খুঁজে নিয়েছেন। তরুণরাও বিষয়টি বেশ ভালোভাবে নিয়েছেন, যেখানে প্রার্থীরা নিজেদের কথা সরাসরি বলছেন। তবে বর্তমান সময়ে ডিজিটাল এ প্রযুক্তিতে প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে কিছুটা নিয়মনীতির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ উস্কানী ও প্রতিহিংসামূলক তথ্য বা বক্তব্যও প্রকাশ করা হচ্ছে।

বরিশাল জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন খান বলেন, প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচনী আইন রয়েছে দেশে। ফেসবুকে বা ডিজিটাল প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে আলাদা কোন আইন নেই। তবে বাধাও নেই। কিন্তু কেউ যদি উস্কানীমূলক বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে কিংবা স্বাভাবিক প্রচার-প্রচারণার আইন অমান্য করে, তাহলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এক্ষেত্রে কোন ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই বলেই আমরাও ফেসবুকে বা ডিজিটাল প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নজরদারি রাখছি।

বাংলাদেশ সময়: ০২১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
এমএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।