তার জনপ্রতিনিধি হয়ে ওঠা সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার (তৎকালীন) হিসেবে। এরপর নির্বাচিত হন পৌর চেয়ারম্যান।
এবার নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) সকালে নগরীর ছড়ারপাড়ের নিজ বাসভবনে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
বাংলানিউজ: মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর উন্নয়নে কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেবেন?
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: পৌরসভা থেকে ২০০৩ সালে প্রথম সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছি। এই শহরের প্রতিটা বিষয় আমার জানা। তিল তিল করে আমিই এই শহরকে গড়েছি নিজ হাতে। সুতরাং শহরের সমস্যা কী এবং কীভাবে এসবের নিরসন করতে হবে তা আমার জানা আছে। সবার সহযোগিতায় শহরের প্রধান প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে। এই শহরের অনেক সমস্যা রয়ে গেছে বিশেষ করে জলাবদ্ধতা, যানজট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা। এগুলো আমি প্রথমেই সমাধান করবো।
বাংলানিউজ: তরুণ প্রজন্মের জন্য উন্নয়নমূলক কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: তরুণ প্রজন্মকে সুন্দরপথে আনার জন্যে যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে সব দেওয়া হবে। ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। নগরীর প্রতিটা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের আওতায় আনবো। কলেজ ও ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অনেক সময় চাকরি পায় না। তাদের বিনা পয়সায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ্য থেকে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করবো। তরুণদের সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের পাশাপাশি খেলাধুলার সু ব্যবস্থা করবো। নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেরও আয়োজন করা হবে। যুব সমাজকে খেলাধুলায় আকৃষ্ট করতে আমি মেয়র ফুটবল কাপ চালু করেছিলাম এটা এখন বন্ধ। মেয়র নির্বাচিত হলে পুনরায় এই প্রতিযোগিতা চালু করা হবে।
বাংলানিউজ: নগরবাসীর মৌলিক চাহিদা পুরণে কী ধরনের ব্যবস্থা নেবেন?
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: আমি বলবো মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যাপারে তিনি (সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক) সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি ১৫০ কোটি টাকা খরচ করে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করে ছিলাম। এখান থেকে দৈনিক দুই কোটি পানি সরবরাহের কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মহানগরীর মানুষ সুপেয় পানি পায় না। আমার সময় জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ কোটি টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি (আরিফুল হক) ২১৪ কোটি টাকা পেয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখন সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। আমি নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানিসহ সকল মৌলিক চাহিদা পূরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো।
বাংলানিউজ: নগরীরর অনেক স্থানে যানজট সৃষ্টি হয়, এগুলো সমাধানে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: সমন্বিত প্রচেষ্টায় যানজট নিরসন করা হবে। এটা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় যানজট নিরসন করা হবে। ফুটপাত হকারমুক্ত করবো। কারণ ফুটপাত মানুষের চলাচলের জন্য হকারদের জন্য না। ফুটপাত হকারদের দখলে যাবে এটা হয় না। আগের মেয়র (আরিফুল হক চৌধুরী) এই বিষয়ে কিছুই করেননি। আমরা ফুটপাতকে দখলমুক্ত রাখবো পাশাপাশি হকারদের পুনর্বাসন করবো।
বাংলানিউজ: সিলেট নগরী নিয়ে গড়া মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হবে কী?
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: মাস্টারপ্ল্যান একটা দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা। এটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্ল্যানে নতুন কিছু যুক্ত করা হবে। অভিজ্ঞ ও নগর পরিকল্পনাবিদদের সহযোগিতায় মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলানিউজ: সিলেট নগরীতে নারীদের জন্য পরিবহনের কোনো সুব্যবস্থা থাকার পরিকল্পনা আছে কী?
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: নগরীতে চলাচলের জন্য নারীদের অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। আমরা এসব সমস্যা অস্বীকার করতে পারি না। আমি নির্বাচিত হলে নারীদের জন্য আলাদা পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। বিভাগীয় শহরে একটা সুন্দর গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সময়ের দাবি। এটা করতে সকল উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাংলানিউজ: এবারই প্রথম সিলেটে দলীয় প্রতীকে (নৌকা প্রতীক) নির্বাচন হচ্ছে, কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: নৌকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় রায় দেন বলেই পর্যায়ক্রমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাই। এই নৌকা মার্কা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক এবং এখন উন্নয়নের প্রতীক। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করাটা আমার জন্য একটা সৌভাগ্যের বিষয়। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের মানুষও এই প্রতীককে ভিন্ন আমেজে নিয়েছে। যে দিকে যাচ্ছি সবার মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ দেখছি।
বাংলানিউজ: সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় কেমন নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে?
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: এখনও বলতে পারি সম্প্রীতির শহর সিলেট। এখানে রাজনীতিতেও সম্প্রীতি বিদ্যমান। এখন পর্যন্ত নগরীতে নির্বাচনের ভালো পরিবেশ রয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলানিউজ: অনেকেই বলছেন, আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ করেছেন, এ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: দেখুন, উনি (আরিফুল হক) নগরীরর উন্নয়নে শতভাগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। শুধু নগরীতে কিছু উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে নাটক করে মানুষের মন যোগানোর চেষ্টা করেছেন।
বাংলানিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: বাংলানিউজ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
এমআইএস/এমএ