ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

শেষ সময়ে প্রচারণায় ব্যস্ত লিটন, অভিযোগে বুলবুল

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
শেষ সময়ে প্রচারণায় ব্যস্ত লিটন, অভিযোগে বুলবুল

রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি। প্রচার-প্রচারণার কলরব থামবে ২৮ জুলাই মধ্যরাতে। তাই শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভোটারদের মনে শেষ আঁচড় কাটতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা।

তবে শুরু থেকেই নানা কারণে পদ্মাপাড়ের রাজশাহী আলোচনায় উঠে আসছে বার বার। নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থী থাকলেও প্রচার-প্রচারণা এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছে বড় দুই দলের প্রার্থীকে নিয়েই।

বিভিন্ন ইস্যুতে দুই প্রার্থীর বাহাসও চলছে।    

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন, নৌকার মাঝি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আর ভোটের মাত্র পাঁচদিন আগে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে অভিযোগের খই ফুটিয়েছেন বুলবুল। কেবল তাই নয়, কর্মী গ্রেফতার হলে নির্বাচন অফিস অচলেরও হুমকি দিয়েছেন সদ্যবিদায়ী মেয়র বুলবুল।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মহানগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীরামপুর বস্তির পথসভা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন লিটন। সামান্য বিরতি দিয়ে দুপুর ১২টা থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চণ্ডীপুর হিন্দুপাড়ায় পথসভা করেন। পরে ওই এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. কায়ছার রহমান মিলনায়তনে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বর্ধিত সভায় যোগ দেন লিটন।

মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে খুলনার সদ্যবিজয়ী মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, গাজীপুরের সদ্যবিজয়ী মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা লিটনের সঙ্গে ছিলেন। মহানগরীতে ভোটের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন তারা। নৌকার প্রার্থী লিটনের জন্য ভোট চেয়ে বিলি করেছেন লিফলেট।  
 
গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী লিটন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে বিএনপি প্রার্থী বর্তমানে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত। এরইমধ্যে নিজেদের কর্মসূচিতে নিজেরাই ককটেল ফাটিয়ে ফাঁদে পড়েছে। জনসমর্থন না পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পাঁয়তারা করছেন, যা প্রমাণিতও হয়েছে’।

এ সময় প্রতিপক্ষের দাবির কথা উল্লেখ করে লিটন বলেন, ‘প্রতিপক্ষ ককটেল ফাটালেও রাজশাহীতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি, যে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন আছে। তারপরও নির্বাচন কমিশন যদি প্রয়োজন মনে করে, সেটি তাদের এখতিয়ার। আমাদের বলার কিছু নেই’।  

এদিকে, মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকার এক পথসভায় লিটন বলেন, ‘বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে আমি নাকি নদীর ধারের বসতি উচ্ছেদ করে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলবো। এটি বিএনপির মিথ্যাচার ও অপপ্রচার। কোনো অপপ্রচারে কান দিবেন না। কারণ আমি অতীতে কোনো বসতি উচ্ছেদ করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। বরং নির্বাচিত হলে আপনাদের উন্নয়নে যা যা করা দরকার, তাই করা হবে’।

চণ্ডীপুর প্রেসক্লাবের মোড়ে পথসভায় লিটন বলেন, ‘যে মেয়র ঈদের আগে করপোরেশনের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়ান, তিনি মহানগরীর ৮ লাখ মানুষের কল্যাণ করবেন কিভাবে? যারা পারে নয়দিনেই পারে, আর যারা পারে না নব্বই বছরেও পারে না। বিএনপির অযোগ্য মেয়রের কারণে পাঁচ বছর রাজশাহী পিছিয়ে গেছে। আমরা আর পিছিয়ে যেতে চাই না। আসুন নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নে শামিল হই।

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে মহানগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নওদাপাড়া এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। দুপুর পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডে গণসংযোগ শেষে মহানগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ সময় নানা অভিযোগ করেন তিনি।  

ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে বুলবুল গ্রেফতার হওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের বুধবারের (২৫ জুলাই) মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান। এছাড়া নতুন করে কোনো কর্মী গ্রেফতার হলে নির্বাচন অফিস অচল করার হুমকি দেন। এর আগে সোমবার (২৩ জুলাই) পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে একই দাবিতে রাজশাহীতে হরতাল দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বুলবুল।  
 
অনুষ্ঠানে বুলবুল বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিএনপির ২শ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজকের মধ্যে তাদের যদি ছাড়া না হয়, তাহলে ২০ দলীয় জোট মিলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে। এ জন্য নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হলে ২০ দল দায়িত্ব নেবে না’।

মেয়র প্রার্থী বুলবুল আরও বলেন, ‘পুলিশ কমিশনারকে বলতে চাই, যদি নতুন করে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে নির্বাচন হবে কি-হবে না, কোনো প্রার্থী বিজয়ী হবে কি-হবে না তা বলতে পারবো না’।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, মিজানুর রহমান মিনু ও ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বুলবুল তার নির্বাচনী ইশতেহারে গণতন্ত্র রক্ষা ও আধুনিক রাজশাহীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। নির্বাচিত হলে করের বোঝা লাঘব ও সহজসাধ্য করা, গ্যাস সংযোগ চালু, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বিষয়ে ইতোপূর্বে গ্রহণ করা প্রকল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উন্নয়ন, আধুনিক নগরীর উপযোগী রাস্তাঘাট তৈরি, ড্রেনেজ-ব্যবস্থা, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করাসহ উন্নয়নের ১৮ দফা পরিকল্পনার কথা জানান বুলবুল।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৮
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।