ভোটের মাঠে আতঙ্ক ছড়ানো মতো কোনো কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন।
এনিয়ে উদ্বিগ্ন প্রার্থী থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। তারা এ বিষয়টিকে প্রতিপক্ষকেকে ঘায়েলে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে কঠোর হস্তে দমনের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
এবারের সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ২২ জুলাই মধ্যরাতে টুলটিকর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নগরীর শাহপরান থানায় বিএনপির ৩৪ জন নেতাকর্মীর নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এর পর বুধবার ও বৃহস্পতিবার নগরীতে দু'টি ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে ককটেল হামলায় আহত হন পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) রায়হান আহমদ। তিনি দক্ষিণ সুরমার কদমতলী ফাঁড়িতে কর্মরত।
ঘটনার পর দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বাংলানিউজকে জানান, রাতে থানা থেকে মোটরসাইকেলে করে কদমতলী ফাঁড়িতে যাচ্ছিলেন এসআই রায়হান। হুয়ায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় যাওয়ার পর একদল যুবক মিছিল সহকারে এসে তাকে লক্ষ্য করে কয়েকটি ককটেল ছোড়ে। এতে রায়হান আহত হন। পরে তিনি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এদিকে কারা বা কোন প্রার্থীর পক্ষে মিছিল নিয়ে এসে এ হামলা করা হয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে না পারলেও বিএনপির ৪৮ নেতাকর্মীর নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এ ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) পৌনে ১টার দিকে নগরীর ছয় নং ওয়ার্ডে চৌকিদেখী এলাকায় মেয়রপদপ্রার্থী কামরানের নির্বাচনী কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ককটেল বিস্ফোরণের সত্যতা পেয়েছে জানিয়ে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌসুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় বিএনপির ৬০ নেতাকর্মীর নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ভোটের মাঠে এহেন নেতিবাচক ঘটনায় তাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হারানোর আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।
প্রার্থীদের এসব অভিযোগ ছাড়াও মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সিলেটে এবার এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যা এ সিটির মানুষের কাছে একেবারেই নতুন। ইতোমধ্যে বেশকিছু ঘটনায় মানুষ বিস্মিত। প্রতিদিনই ঘটে যাওয়া এসব ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
শুক্রবার (২৭ জুলাই) রাতে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, কিছু সাজানো মামলায় আসাদের কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগেও তার দু'কর্মীকে আটকের ঘটনায় ডিবি অফিসে গেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় । নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ তার কর্মীকে পোস্টার লাগানোর সময়ে ধরে নিয়ে যায়।
এসব কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশীল সমাজের নেতারা বলেছেন, নির্বাচনী মাঠে দ্বৈতশাসন চলছে। প্রার্থীদের কারো প্রতি সদয়, কারো প্রতি নির্দয় আচরণ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটে এখন দ্বৈতশাসন চলছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের। তারা দায়িত্বশীল হলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থীর নির্বাচনী অফিস জ্বলতো না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের নতুন মামলা দিয়ে গ্রেফতার অভিযান চললেও একটি ছদ্মবেশী দলের নেতাকর্মীরা মামলায় অভিযুক্ত থাকলেও তারা প্রকাশ্যে মিছিল, সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। তাদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে না। এতেই প্রতীয়মান তারা কারো প্রতি সদয়, কারো প্রতি নির্দয়। তাছাড়া অজ্ঞাত আসামিদের না ধরতে পুলিশ কমিশনারকে বলেছিলাম। এসব করে তারা প্রধানমন্ত্রীর কথাও মানছেন না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও প্রশ্নবিদ্য করে তুলেছেন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু বিএনপি নয় কোনো নেতাকর্মীদের ধরপাকড় না করতে উচ্চ আদালত ও নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও গ্রেফতারের কারণে সাংবিধানিক লঙ্ঘণের কারণে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা না নিলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া ককটেল বিস্ফোরণের নেপথ্যের ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা না নিলেও নির্বাচনকে কলুষিত করার জন্য নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৮
এনইউ/এএটি