কাক ডাকা ভোর থেকে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থী-সমর্থকরা। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে শেষ সালাম জানাতে হাজির হচ্ছেন।
১০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রচার-প্রচারণা শনিবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। ফলে প্রার্থীদের শেষ দৌড় অলি-গলি ও মাঠে-ময়দানে।
শুক্রবার (২৭ জুলাই) ভোর রাত পর্যন্ত নির্ঘুম প্রচারণার পরও ক্লান্ত এবং পরিশ্রান্ত দেহাবয়ব নিয়ে ফের শনিবার সকাল থেকে ভোটারদের দুয়ারে হাজির প্রার্থীরা। ছুটছেন এপাড়া থেকে ওপাড়ায়, এক মহল্লা থেকে অপর মহল্লায়। এ যেন শেষ সুযোগ ভোট কুঁড়ানোর। এ সুযোগ ভুলের হাতছাড়া করছেন না কোনো প্রার্থী। চোখে মুখে প্রত্যাশা ও হতাশার চাপ নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে দেখা যায় তাদের। সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান (নৌকা) এবং অপর প্রার্থী বিএনপি মনোনীত ও সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ)। এ দু’জনের প্রচার যুদ্ধ চরমে হলেও বসে নেই অপর প্রার্থীরা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি), বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবু জাফর (মই), ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খান (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহছানুল হক তাহের (হরিণ) শেষ প্রচারণায় নিমগ্ন।
প্রচারণার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ভ্যানগাড়িতে নৌকা বেঁধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ প্রচার করে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টায়ব্রত। পাশাপাশি তিনি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে পাড়া-মহল্লায় গিয়ে জীবনের শেষ নির্বাচনের আবদার ব্যক্ত করে চলছেন।
অন্যদিকে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। তুলে ধরছেন তার দু’বছরের উন্নয়নের খতিয়ান। ব্যক্ত করছেন আধুনিক সিলেট গড়ার পরিকল্পনা।
শুক্রবার মধ্যরাত ১২টা থেকে বহিরাগতদের নগর ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হলে অনেকটা ফাঁকা হয়ে পড়ে সিলেট নগর। তাই দৃশ্যপটে চলে আসছে প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রচার-প্রপাগান্ডা। নির্বাচনী প্রচার ছাড়া তেমন কিছুই পরিলক্ষিত হচ্ছে না নগরে।
মিডিয়া কর্মীরাও নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ততম সময় পার করছেন। স্থানীয় মিডিয়া কর্মীদের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা থেকে আসা গণমাধ্যমকর্মীরাও যোগ দিয়েছেন সংবাদ সংগ্রহ কাজে। বিভিন্ন হোটেল-মোটেল অনেকটা বর্ডার শূন্য হলেও এ শূন্যতা পূরণ করে চলেছেন আসা গণমাধ্যমকর্মী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। গণমাধ্যম ছাড়াও সোস্যাল মিডিয়ায়ও চলছে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণার তাৎক্ষণিক সচিত্র সংবাদ, প্রতিবেদন ও ভিডিওবার্তা। সবমিলিয়ে সিলেট নগরে নির্বাচনী প্রচারণা তুঙ্গে ও শেষ দিগন্তে।
সোমবার (৩০ জুলাই) সিসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ছয় জন, সাধারণ কাউন্সিলর ১২৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ জন প্রার্থী নির্বাচন যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে নগরের ২৭ ওয়ার্ডে ১৩৪ কেন্দ্রে ৯২৬টি কক্ষে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের প্রতিনিধি।
এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জানিয়ে সিসিক নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান বলেন, আজ রাত ১২টায় প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে। রোববার সকাল থেকে নগরের আবুল মাল আব্দুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো হবে।
নির্বাচনকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন এজন্য নগরের ১৩৪টি ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা ঢেলে সাজাচ্ছে মাঠ প্রশাসন। মাঠে থাকছে ১৪ প্লাটুন বিজিবি। রিজার্ভ রাখা হবে আরও চার প্লাটুন।
বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, ব্যাটালিয়ন পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার ও আনসার-ভিডিপির কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবেন নগরের প্রতিটি কেন্দ্রে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৮
এনইউ/আরবি/