নারীদের ‘আবেগপ্রবণ’ ভোট যেদিকে যাবে, সেই প্রার্থীর গলায় উঠতে পারে বিজয়ের মালা। এই হিসাব থেকে প্রচারণার ১৮ দিনই নারী ভোটারদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা।
ভোটের ময়দানে পুরুষ ভোটাররা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ করলেও বেশিরভাগ নারীর পছন্দে থাকেন প্রার্থী ও তার ব্যক্তিত্ব। সে হিসেবে দেড় লাখ নারীর ভোটে যার প্রভাব বেশি থাকবে, তার বিজয় অনেকটা ত্বরান্বিত হবে মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
এ কারণে প্রত্যেক প্রার্থী নারীদের আবেগ-অনুভূতিতে প্রভাব ফেলতে চালিয়েছেন নানান কৌশল। প্রার্থীদের সঙ্গে সমান তালে প্রচারণায় কাজে লাগিয়েছেন তাদের সহধর্মিণীসহ অন্য নারীদের। যেন নারীরাই নারীদের ভোট টানতে পারেন!
শনিবার (২৮ জুলাই) শেষ দিনের প্রচারণায়ও প্রার্থীদের হয়ে তাদের সহধর্মিণী ও নারী সমর্থকরা চষে বেড়িয়েছেন নগরের পাড়া-মহল্লা অলিগলিতে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গড়ে প্রায় ২০ হাজার নারী ছিলেন বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে প্রচারণায়।
সিসিক নির্বাচনের প্রচারণায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সহধর্মিণী আসমা কামরান স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছিলেন নির্ঘুম প্রচারণায়। দলের নেত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। পাশাপশি নারী ভোটারদের বিভিন্ন পথসভায়ও উপস্থিত করে ভোট প্রার্থনা করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর প্রচার-প্রচারণায় ছিলেন তার সহধর্মিণী শ্যামা হক। একইভাবে তিনিও নারী নেত্রী ও সমর্থকদের নিয়ে স্বামীর বিজয় অর্জনে ভোটের মাঠে নারী ভোটারদের সমর্থন আদায়ে কাজ করে গেছেন।
একইভাবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে তাদের সহধর্মিণী থেকে শুরু করে নারী আত্মীয়-স্বজনরা ভোটের মাঠে প্রচার-প্রচারণায় সরব ছিলেন।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ) সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল মুকিত বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে ভোটারদের অর্ধেকই নারী, সেখানে নারীরাই পারেন তাদের ভোটের মাধ্যমে হিসাব পাল্টে দিতে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ভোটারদের প্রায় অর্ধেক নারী হলেও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনো ভোটারই সচেতনভাবে চাইলে সিসিকের ভোটের ফলাফল কোনো দিকে যেতে পারে।
২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। তখন তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরান প্রথম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালের জুন মাসে প্রথম সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে প্রায় ৮৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ সালে ৩য় নির্বাচনে টেলিভিশন প্রতীকে আরিফুল হক চৌধুরী ও আনারস প্রতীকে নির্বাচন করেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। কিন্তু ৩৫ হাজার ১শ ভোটের ব্যবধানে আরিফের কাছে পরাজিত হন কামরান।
৩০ জুলাই চতুর্থবারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি), বাসদ মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর (মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খান (হাতপাখা), ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহছানুল হক তাহের (হরিণ) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এবার মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৪টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯২৬টি। এর মধ্যেঅস্থায়ী ভোটকক্ষ হলো ৩৪টি। ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন। সে হিসেবে গত নির্বাচনের চেয়ে এবার ৩০ হাজার ৬৪৮ জন ভোটার বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
এনইউ/এএ