সোমবার (৩০ জুলাই) বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট থেকে বাংলানিউজের করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো খবর।
বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এক লাখ সাত হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
রাত ১২টার দিকে বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. মুজিবুর রহমান এ ফলাফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে ১২৩টির মধ্যে ১০৭টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
>>আরও পড়ুন...বরিশালের নগরপিতা সাদিক আবদুল্লাহ
এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী হাত পাখা প্রতীকে ওবাইদুর রহমান (মাহবুব) পেয়েছেন ছয় হাজার ৪২৩ ভোট। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মই প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী পেয়েছেন এক হাজার ৯১৭ ভোট। জাতীয় পার্টির (জাপা) (বহিষ্কৃত) মেয়র প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন (তাপস) লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৬৯৬ ভোট। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী কাস্তে প্রতীক নিয়ে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন ২৪৪ ভোট। শেষ সময়ে এসে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হরিণ প্রতীক নিয়ে বশীর আহমেদ ঝুনু পেয়েছেন ৮১ ভোট।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে মোট দুই লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন ভোটারের মধ্যে এক লাখ ২০ হজার ৭৩০ জন নারী ও এক লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন পুরুষ রয়েছেন।
রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এক লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট। ভোটের ব্যবধান ৮৭ হাজার ৩৯৬।
রাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বেসরকারিভাবে এ ফল ঘোষণা করেন।
যদিও নির্বাচনে বুলবুল নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। একইসঙ্গে ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে তিন সিটিতে ফের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
>>আরও পড়ুন...সাদিক আব্দুল্লাহ, খায়রুজ্জামান লিটন ও আরিফুল হক
রাসিকে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হয় লিটন ও বুলবুলের মধ্যে। অপর তিন প্রার্থী হলেন- কাঁঠাল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হাবিবুর, হাতি প্রতীকে গণমঞ্চ ও গণসংহতি আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ এবং হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম।
এদিকে, ভোটকেন্দ্রে সজল নামে এক আওয়ামী লীগ সমর্থককে ছুরিকাঘাত করার ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাসিক নির্বাচনে তেমন কোনো অপ্রিতীকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এই সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। মোট ভোটারের মধ্যে এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন।
সিলেট: দু’টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত হওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিকে) নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী কারো নাম ঘোষণা করতে পারেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
তবে এ সিটিতে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ভোট পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট।
সিসিকে মোট ১৩৪ কেন্দ্রের মধ্যে বিশৃঙ্খলার জন্য দুই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ওই দুটি হলো গাজি বুরহান উদ্দিন রহ. মাদরাসা ও হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এ দুই কেন্দ্রের মোট ভোট ৪৭৮৭। চার হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে থাকা আরিফুল হকের প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে স্থগিত কেন্দ্রের ভোটের ব্যবধান ১৬১ ভোট।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জমান জানান, নির্বাচন কমিশনের ৩৭ এর ২ উপধারায় একের অধিক কেন্দ্র থাকলে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট না হলে স্থগিত কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
>>আরও পড়ুন...সিসিকে আরিফেই শেষ হাসি!
তবে বাস্তবতার নিরিখে এ দুই কেন্দ্রের ভোটের পার্থক্য আরিফের জন্য এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
এর আগে, সকাল ৮টায় সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরান ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে দাবি করে জয় পাওয়ার প্রত্যাশা করেন। তবে দিনভর কারচুপির অভিযোগের পর বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির আরিফুল হক।
এদিকে, ফল ঘোষণা করার শেষ পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের এজেন্টদের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে ১০ থেকে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধান রয়েছে। এতে করে নির্বাচনের ফলাফল না ঘোষণা করে পুনঃগণনার আবেদন করা হয়। লিখিত আবেদনটি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সিলেট সিটিতে মোট ভোটার তিন লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী এক লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। এই ভোটারের বিপরীতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন এক লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৭ জন। মোট ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে প্রাপ্ত মোট ভোট এক লাখ ৯১ হাজার ২৮৯টি। বাতিল ভোট রয়েছে ৭ হাজার ৩৬৭টি।
এ তিন সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে মোট ১৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নগরপিতা নির্বাচিত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
এনটি