অপরদিকে, নির্বাচনী মাঠে তুলনামূলক নীরব রয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি। প্রচারণা শুরুর পরের দিন শহরের পাগলা মিয়ার মাজার জিয়ারত করে তিনি প্রচারণা শুরু করলেও তা এখনও সীমাবদ্ধ রয়েছে বিএনপি অধ্যুষিত রামপুরেই।
তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিএনপিসহ জোট নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো নেতাকর্মীর বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ইতোমধ্যেই কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীকে ধরাও হয়েছে। সরকার দলীয়দের হামলা এবং পুলিশের গ্রেফতার ও মামলার ভয়ে নেতাকর্মীরা বাড়িতেই থাকতে পারছেন না, প্রচারণা করাতো দূরের কথা।
ফেনী সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী জনসভা করে করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই বালিগাঁও, ফাজিলপুর, ফরহাদ নগর, শর্শদি, ধর্মপুর, পাঁছগাছিয়া ও ছনুয়া ইউনিয়নে জনসভা করেছেন তিনি। তার মধ্যে বালিগাঁওয়ে নিজাম হাজারীর জনসভায় উপস্থিত হয়ে আগত জনগণের কাছে ভোট চান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।
প্রচারণায় নিজাম হাজারী স্ত্রী নুরজাহান বেগম নাসরিন ও মেয়ে নুর আহাদ জাহান স্নিগ্ধা হাজারীকেও সঙ্গে রেখেছেন। স্ত্রী-কন্যা তার জন্য ভোট চাইছেন।
তিনি ফেনী পৌরসভার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে করেছেন নির্বাচনী অফিস। এসব অফিসে সরাদিন চলছে নৌকার প্রচারণা। বলা হচ্ছে সরকারের উন্নয়নের কথা।
অপরদিকে, ধানের শীষের প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি শহরের পাগলা মিয়ার মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। পরে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শহরের এসএসকে সড়কের সমবায় সুপার মার্কেটের সামনে সংক্ষিপ্ত পথসভা করেছিলেন। এ সভা থেকে যাওয়ার সময় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদসহ তার কয়েক নেতাকে যুবলীগ নেতাকর্মীরা পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের দাবি যে প্রচারণায় নামছে, তাকে হামলা ও মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। আর সে কারণেই জমানো যাচ্ছে না প্রচার কার্যক্রম। এদিকে, বিএনপির তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছে, ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠছে না। তারা বলছেন- ভিপি জয়নাল বারবার এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন আসলেই তিনি এলাকায় আসেন, বাকি সময় তাকে দেখা যায় না। দলের নেতাকর্মীরা জেল-জুলুমের শিকার হলেও তিনি তাদের খবর রাখেননি। সে কারণে নেতাকর্মীরা স্বতস্ফূর্তভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক জয়নাল আবদীন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, প্রথমদিন প্রচারণায় নেমেই তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। নেতাকর্মীদের এমন উপস্থিতি দেখে পুলিশের ধরপাকড় অভিযান বেড়ে যায়। রাতে জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারি, যুবদল সাংগঠনিক সম্পাদক নঈম উল্লাহ চৌধুরী বরাত, স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক এসএম কায়সার এলিনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বাসা-বাড়িতে হানা দেয় তারা। পুলিশের সঙ্গে সরকারি দলের নেতাকর্মীরাও অভিযানে অংশ নিচ্ছে বলে তার অভিযোগ। তার মতে, সারাদেশের মতো ফেনীতেও নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।
তবে নিজাম উদ্দিন হাজারী জয়নাল আবেদীননের এসব অভিযোগ ভুয়া-বানোয়াট উল্লেখ করে বাংলানিউজকে বলেন, ফেনীতে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার পূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সরকারি দলের পক্ষ থেকে কোথাও কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। বিগত ১০ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন করায় নৌকার প্রচারণায় সাধারণ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। ভিপি জয়নাল এবং বিএনপি সরকার ফেনীর উন্নয়নে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখেননি। সে কারণেই এ জনপদের মানুষ আর তাদের চায় না। তাছাড়া বিএনপি নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই নির্বাচনী মাঠে দাঁড়াতে পারছে না।
এছাড়া ফেনী-০২ আসনে ইসলামী আন্দোলনের নুরুল করিম বেলালী (হাতপাখা) বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জসিম উদ্দিন (কোদাল) ও জাকের পার্টির নজরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
এ আসনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১২৬টি। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৬৮ হাজার ১৬৯। আর পুরুষ এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৯৩। মোট ভোটার তিন লাখ ৪৮ হাজার ১৬২ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
এসএইচডি/টিএ