ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

‘কর্মীদের না আমায় গুলি করতে বললাম, ওসি গুলি করে দিলো’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
‘কর্মীদের না আমায় গুলি করতে বললাম, ওসি গুলি করে দিলো’

ঢাকা: সোনাইমুড়িতে প্রচারণাকালে ছররা গুলিতে আহত হওয়ার বর্ণনা দিয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেছেন, ‘কর্মীদের গুলি করতে দেখে পুলিশকে বললাম, মানুষকে গুলি কইরেন না, আমাকে করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমায় গুলি করে দিলো!’

বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

গত ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে সোনাইমুড়ি বাজারে প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে ছররা গুলিতে আহত হন খোকন।

সেজন্য সোনাইমুড়ি থানার ওসিকে অভিযুক্ত করে তার প্রত্যাহারে ১৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেন খোকন।

বুধবার সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য পুলিশ প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ একাকার হয়ে গেছে। যেটা সম্পূর্ণ সংবিধানপরিপন্থি বলে আমি মনে করি এবং এটা করা উচিত নয়। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এসব করছে তাদের পরিবর্তন করার জন্য আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি। ’

তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার কথাও বলেছি। সেখানে কোনো আওয়ামী লীগ ছিল না। আওয়ামী লীগের কোনো মিছিল ছিল না, কিছুই ছিল না। আমার গণসংযোগের পেছনে পুলিশ ছিল, সামনেও ছিল। পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আমার গণসংযোগের বিষয়ে অবহিত করা ছিল। এক পর্যায়ে সোনাইমুড়ি থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ মানুষের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করা শুরু করলো। আমি নিষেধ করে বললাম গুলি করছেন কেনো? গুলি স্টপ করেন প্লিজ। তারপরও ওসি সাহেব গুলি স্টপ করছেন না। সম্ভবত শটগান ছিল- স্প্লিন্টারের আঘাতে পড়ে যাচ্ছিল। আমি বললাম মানুষকে গুলি কইরেন না। গুলি করলে আমাকে করেন। তখন আমাকে সে গুলি করে দিলো! আমার কণ্ঠনালীর ওখানে গুলি লেগে রক্ত ঝরছিল। আমি বললাম আপনি আমাকে গুলি করে দিলেন? গুলি করলেন আমাকে? তারপর তিনি বললেন, ‘আপনি ওদিকে যান’। তার দেখানো দিকে যাওয়ার সময় সেখানে পেছনে আবার গুলি করে দিল। আমার মোট সাতটা গুলি লাগছে। পেছনে ৬টা, সামনে ১টা। ’

সাক্ষাতে সিইসির সঙ্গে আলাপের ব্যাপারে খোকন বলেন, ‘আমি সিইসিকে বললাম যে পুলিশ কী বললো না বললো এটা কোনো ম্যাটার না। আমি একজন ল’ইয়ার হিসেবে, ব্যারিস্টার হিসেবে আন্ডারওয়েট হিসেবে বলছি- এই হলো ঘটনা। সেখানে কোনো আওয়ামী লীগের লোক ছিল না। পরবর্তীতে আমি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পরে পুলিশের প্রহরায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপি কর্মীদের যতো দোকান-পাট ও হাসপাতাল ছিল, সব ভাঙচুর করছে। ভাঙচুর করার পর তারা ভিন্ন স্টোরি বানিয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না। চাটখিল ও সোনাইমুড়িতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কাছে যে অস্ত্র আছে, দুই-তিন থানায়ও এতো অস্ত্র নাই। অস্ত্র উদ্ধার করেন। উনারা (কমিশন) বলেছেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ’

খোকন অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমর্থক অবৈধ অস্ত্রধারীরা এবং পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে। নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ভোট চাইছে না। তাদের প্রার্থী-কর্মীরা ভোট চাইছে না। মানুষকে হয়রানি করছে, সন্ত্রাস করছে এবং পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করছে, মানুষকে আহত করছে। শুধু আমার এলাকায় না, এটা সারা বাংলাদেশে একই কাজ করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কর্মীরা কোথাও ভোট চাইছে না। তারা মিছিলে হামলা করছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। এসব বিষয়ে জানানোর পর সিইসি বলেছেন- সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে আমরা বদ্ধপরিকর। ’

প্রার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্যও সিইসিকে বলেছেন জানিয়ে খোকন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া। সব ভোটাররা যেন তাদের ইচ্ছেমতো ভোট দিতে পারেন, সেজন্য ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়াও কমিশনের দায়িত্ব। আমি সোনাইমুড়ি থানার ওসির প্রত্যাহার চেয়েছি। চাটখিল থানার ওসির বিষয়েও তদন্ত করে তার প্রত্যাহার চেয়েছি। এগুলি তিনি (সিইসি) শুনেছেন। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেষ্টা করছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮
ইইউডি/এইচএ/

** এবার চাটখিলের ওসির প্রত্যাহার চাইলেন মাহবুবউদ্দিন খোকন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।