ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নির্বাচনী নিরাপত্তায় ৮০ ভাগ পুলিশ, পূর্ণশক্তি র‌্যাবের

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
নির্বাচনী নিরাপত্তায় ৮০ ভাগ পুলিশ, পূর্ণশক্তি র‌্যাবের বাংলানিউজ গ্রাফিকস

ঢাকা: আর মাত্র কয়েকদিন পরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এদিন দেশজুড়ে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে দায়িত্ব পালন করবেন সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসার, গ্রামপুলিশের সদস্যরা মাঠে থাকলেও নিরাপত্তার মূলদায়িত্ব থাকছে পুলিশের উপর।

সূত্র জানায়, পুলিশের ২ লাখ ১০ হাজারের ফোর্সের মধ্যে নির্বাচন কেন্দ্রিক কম-বেশি ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। সে হিসেবে প্রায় ৮০ ভাগ সদস্যই ব্যস্ত থাকবেন নির্বাচনী দায়িত্বে।

ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোটগ্রহণের দু’দিন আগে এবং ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিনসহ মোট চারদিন মাঠে থাকবেন।

এদিকে, ভোটের মাঠে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সার্বক্ষণিক টহলরত থাকলেও পূর্ণশক্তি নিয়ে মাঠে থাকার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। পুলিশের বিশেষায়িত এ বাহিনীটির প্রায় সব সদস্যই নির্বাচনী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তার বিষয়ে ইতোমধ্যে পূর্ণ ছক প্রস্তুত করেছে পুলিশ। সারাদেশের বিভাগীয় রেঞ্জের ডিআইজি ও জেলার এসপিদের ঢাকায় ডেকে এ বিষয়ে দু’দফা ব্রিফ করেছেন নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ভোটের দিন ও আগে-পরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদস্যরা অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।

পুলিশের ঊর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনকালীন সারাদেশে কমবেশি ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রত্যেকে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা মাঠে কাজ করবেন, কেউ দুই শিফটে ১৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি দায়িত্ব পালন করবেন। সে হিসেবে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

নির্বাচনের আগে ও পরে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, কেন্দ্রে ব্যালট ও ব্যালটবাক্স আনা-নেওয়া, নির্বাচনী কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানান তিনি।

নির্বাচনী পরিবেশ ও পুলিশের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান সংক্রান্ত সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত সন্তোষজনক। নির্বাচন কেন্দ্রভিত্তিক যেসব নিরাপত্তা প্রস্তুতি প্রয়োজন তা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি পুলিশি নিরাপত্তায় নির্বাচন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ হবে।

র‌্যাব জানায়, র‌্যাবের ১২ হাজার সদস্যের মধ্যে প্রায় সব সদস্যই নির্বাচনকালীন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। দেশজুড়ে ১৪টি ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে নিজেদের উপর অর্পিত দায়ত্ব পালন করবেন তারা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকালীন সহিংসতার কথা বিবেচনায় রেখে সেসব সহিংসতাপ্রবণ এলাকায় বাড়তি নজরদারীর কথা জানিয়েছে বাহিনীটি।

র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনের সময় র‍্যাবের পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় র‍্যাবের দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে পুরো ফোর্স নির্বাচনী মাঠে নিয়োজিত হবে।

নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) থেকে সারাদেশে ১ হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে তাদের টহল দিতে দেখা গেছে।
 
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা বাংলানিউজকে বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শঙ্খলা রক্ষার্থে সারাদেশে ১ হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবে।

এদিকে, নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর অংশ হিসেবে ২৪ ডিসেম্বর থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।

র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন। সেনাবাহিনীর প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, সেনাবাহিনী ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষে ঢুকতে পারবে না। তবে রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা চাইলে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিমের সদস্যরা প্রয়োজনে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।

দেশজুড়ে সব কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বিবেচনায় সেসব কেন্দ্রে বাড়তি সদস্য মোতায়েন থাকবে। অন্যদিকে পার্বত্য এলাকা, হাওর ও দ্বীপাঞ্চলকে বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলার প্রস্তুতি বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোত্তম ও চমৎকার। নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ আছে, সেরকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
পিএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।