দুই দফায় প্রথম অর্ডারের পোস্টারই এখনও সব সরবরাহ করতে পারেনি ছাপাখানাগুলো। তার মধ্যে বৃষ্টির কারণে এখন আবার যোগ হয়েছে এসে অতিরিক্ত অর্ডার।
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাটাবন, হাতিরপুল, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট রোড, নীলক্ষেত, আজিমপুর, পল্টন, নয়াপল্টন, আরামবাগ, ফকিরাপুলের ছাপাখানাগুলোর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমনই মহা চাপের কথা।
তখন ছাপাখানাগুলো ঘুরে দেখা যায়, অর্ডার করা পোস্টার নিদির্ষ্ট সময়ে ডেলিভারি দিতে শিফট করে কাজ চলছে ছাপাখানাগুলোতে। এর জন্য এখানকার হেলপার পর্যন্ত যোগ হয়েছেন ছাপা কাজে। তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে মেশিন ম্যানের কাজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ছাপাখানায় ১০ গুণ চাপ বেড়ে যায়। এরপর টাঙানো পোস্টার যখন বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেলো, তখন থেকে অতিরিক্ত অর্ডারে ছাপাখানাগুলোতে মহাকর্মযজ্ঞ লেগে গেছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও প্রায় শেষ করা যাচ্ছে না সব অর্ডার।
এর আগে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রচারণা করতে দফায় দফায় পোস্টার ছাপিয়েছিলেন প্রার্থীরা। তখনও মোটামুটি ভালো ব্যস্ত ছিল ছাপাখানাগুলো। আর সে সময় থেকেই ছাপাখানায় শিফটভিত্তিক কাজ শুরু হয়। তারপর থেকে আর থেমে নেই তাদের কাজ।
জানা গেছে, ঢাকার প্রতিটি ছাপাখানায় তিন থেকে আট লাখ পর্যন্ত পোস্টার, স্লিপ, লিফলেট ছাপার কাজ চলছে। আর এখন তৃতীয় দফায় চলছে পোস্টার ছাপানোর কাজ।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে আগে থেকেই ছাপাখানার মালিকরা কাগজ, কালিসহ বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে রেখেছেন। এখন ক্যালেন্ডার, ডাইরির পরিবর্তে পোস্টারকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু ছাপাখানায় শুধু ক্যালেন্ডার, ডায়েরি আর লেমিনেটিংয়ের কাজ চলছে।
কাজের চাপে ঘুম নেই ছাপাখানার কর্মীদের। এমনকি সময় মতো খাওয়াও হচ্ছে না তাদের।
নীলক্ষেত বিগগো প্রেসের মেশিন ম্যান ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, এখন ২৪ ঘণ্টা কাজ করা লাগছে। শিফটভিত্তিক কাজ করি আমরা। একজন বিশ্রাম করতে গেলে, অন্যজন কাজে নেমে পড়েন। পাশাপাশি হেলপারও এখন মেশিন ম্যানের কাজ করছেন। নিজেরাই শিফট চালাচ্ছি।
এদিকে, গত বছর যে দাম ছিল, সেটাতেই পোস্টার ছাপার কাজ চলছে এবারও। তাতে ছাপাখানা মালিকরা হতাশ হলেও ডাবল অর্ডার পেয়ে এখন খুশি। এবার বড় সাইজের (১৮ থেকে ২৩ ইঞ্চি) প্রতিটি পোস্টার ছাপাতে খরচ পড়ছে পাঁচ টাকা, ছোট (নয় থেকে পৌনে ছয় ইঞ্চি) সাইজের পোস্টার এক টাকা ৭৫ পয়সা। এছাড়া স্লিপ সাইজের প্রতিটি লিফলেটে ছাপাতে খরচ পড়ছে ৬৫ পয়সা। যা গত বছরেও একই দাম ছিল।
এএন প্রিন্টার্সের পরিচালক শাহাদত আবরার বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর ঈদ ও বৈশাখ ঘিরে তেমন ভালো কাজের অর্ডার আসেনি। তবে এবার জাতীয় নির্বাচন ও নতুন বছর একসঙ্গে হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশ আশাবাদী। দুই দফা পোস্টারের অর্ডার শেষ হয়েছে। এছাড়া কয়েক দিনের বৈরি আবহাওয়ার কারণে আবারও অর্ডার আসতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমরা মূলত বছরের পুরোটা সময় ডায়েরি, ক্যালেন্ডার ও বই ছাপার কাজ করি। এখন সময়টাকে আমরা ক্যালেন্ডারের সময় বলি। তাছাড়া নির্বাচন বা কোনো দিবসে পোস্টার তৈরির কাজ বেশি হয়।
শাহাদত আবরার আরও বলেন, নির্বাচন ঘিরে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ অর্ডার পেয়েছি। ঢাকার বাইরে থেকেও কাজ এসেছে। তবে একসঙ্গে দুই উৎসব পড়ার কারণে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে কাজ করে।
ফারুক প্রিন্টার্সের মালিক ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে এক প্রকার রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল দেশের প্রিন্টিং ব্যবসায়ও। এ বছর জাতীয় নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করায় মনে হচ্ছে ছাপাখানা আবার সচল হবে। ইতোমধ্যে কাজের অর্ডার আসতে শুরু করেছে, আমাদের ব্যস্ততাও বেড়েছে প্রচুর।
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮
ইএআর/টিএ