হাজী সেলিমের বিপরীতে এক সময়কার আওয়াম লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু এখন ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে ঢাকা-৭ আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
ভোটাররা বলছেন, জনপ্রিয় হাজী সেলিমের বিপরীতে ‘ধার’ করা প্রার্থী তেমন একটা সুবিধা করতে পারবে না।
এই এলাকায় হাজী সেলিম ও পিন্টুর ভোটের লড়াই ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসন। পুরান ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, কোতোয়ালী, বংশাল এলাকার ভোটারদের কাছে খুবই পরিচিত হাজী সেলিম।
মালিটোলার বাসিন্দা খয়ের উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, হাজী সেলিম কী রকম জনপ্রিয়, সেটা ২০১৪ সালেই বোঝা গেছে। কারণ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে তিনি পরাজিত করেছেন হাতী মার্কায় নির্বাচন করে। মানুষ তাকে পছন্দ করে। তিনি সবসময় এলাকার মানুষের বিপদে আপদে হাত বাড়িয়ে দেন। সুতরাং এখানে তার বিকল্প নেই।
ভোটারদের মুখের কথা হাজী সেলিমের গণসংযোগেও প্রকাশ পাচ্ছে। তবে তিনি গণসংযোগ করছেন তার ছেলে সোলেমান সেলিমকে নিয়ে। কারণ বাকশক্তির সমস্যায় ভুগছেন হাজী সেলিম।
গণসংযোগকালে হাজী সেলিমের ছেলে সোলেমান সেলিম বলছেন, প্রায় ৩০ ভাগ তরুণ ভোটার। তাদেরকে নৌকা প্রতীকে ভোটের বিষয়ে অবগত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস স্মরণ করাতে হবে। বাবা অসুস্থ হলেও এলাকার উন্নয়নের জন্য সব করেছেন।
‘উনি আস্থা সৃষ্টি করেছেন। এর কোনো বিকল্প নেই। মানুষ আমাদের পাশে থাকবে। আমরা তাদের ভোট চাই। ’
লালবাগ এলাকার ভোটার মুলকুতুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয়ভাবে হাজী সাহেবের অবস্থান ভালো। আর যদি ভোটাররা দলীয়ভাবে চিন্তা করেন তাহলে প্রার্থী বিষয় নয়, প্রতীকই বিষয়। সেক্ষেত্রে মন্টু ধানের শীষের ভোট পাবেন। কিন্তু তাকে তো প্রচারণায় তেমন একটা দেখা যায় না। পোস্টারও চোখে পড়ছে না তার।
এ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বিএনপির নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মো. সেলিম।
মোস্তফা মূলত কেরানীগঞ্জ এলাকায় প্রভাব রাখেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি ওই এলাকায় আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। তাই নদীর এপারে এসে তিনি কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন সেটাই দেখার বিষয়, বলছেন ভোটাররা।
এবারের নির্বাচনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হাজী মো. সেলিমের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।
ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. সাঈদ খোকন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। সেই থেকে দলীয়ভাবে নেতাকর্মীরা তার সমর্থনে বিরামহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ২৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫০ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৯ জন।
ঢাকা-৭ আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের খালেকুজ্জামান (মই), জাতীয় পার্টির তারেক আহমেদ আদেল (লাঙল), জাকের পার্টির বিপ্লব চন্দ্র বণিক (গোলাপ ফুল), গণফ্রন্টের মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (মাছ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মো. আফতাব হোসেন মোল্লা (হারিকেন), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবদুর রহমান (হাতপাখা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (টেলিভিশন), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মাসুদ পাশা (আম), গণফোরামের মো. মোশাররফ হোসেন (উদীয়মান সূর্য) এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. হাবিবুল্লাহ (বটগাছ)।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮
এমআইএইচ/ইএস/জেডএস