বরিশালের ৬টি আসনে প্রার্থী-কর্মী ও ভোটারদের পরিসংখ্যানে, প্রচার-প্রচারণার মাঠে বরিশালের ৬টি আসনেই এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলে এবং সংবাদ সম্মেলন করে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা।
তথ্যানুযায়ী বরিশাল-৬ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগে গত ২৯ নম্ভেবর প্রথম প্রশাসনের পক্ষপাততুষ্টদের অপসারণ চেয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। বরিশাল নগরের সদররোডস্থ বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল-৫ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইচ চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান এবং বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ব্যাপক শো ডাউন দিয়ে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচরণায় নামা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন গত ১৭ ডিসেম্বর নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। যেখানে তিনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার মাঠে নিজের কোণঠাসা অবস্থান ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ১০ পাতার লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন। যদিও এ সংবাদ সম্মেলনেই ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তার ক্ষমতামলে বরিশালের গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়টি আবারো সামনে চলে আসে। এদিকে ওইদিন বিকেলে বরিশাল-২ আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনের মতো করে উজিরপুরে গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ তুলে ধরেন গণমাধ্যমের কাছে।
সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জে বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনের ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জে এম নুরুর রহমানের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। যেখানে লিখিত বক্তব্যে প্রার্থীর পা ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ তোলা হলেও হাসপাতালের চিকিৎসকরা তা অস্বীকার করেন। একই দিন মামালা ও নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ নিজ বাসভবনে বরিশাল-৫ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার সংবাদ সম্মেলন করেন। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের দাবি, শুধু সংবাদ সম্মেলন নয়, তারা তাদের অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
এদিকে ঝুঁড়ি ভড়া অভিযোগের বিপরীতে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীরা পুরোদমে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। আবার কৌশলগতকারণে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা দল পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলে, তাদের সে সুযোগ করে দিচ্ছেন অনেকটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে। এরইমধ্যে বরিশাল-১, ২, ৪ ও ৫ আসনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশকিছু নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হাতে ফুল দিয়ে দল পরিবর্তনও করেছেন। এমনকি বরিশাল-৩ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর হাতে ফুল দিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতা দল পরিবর্তন করেছেন।
এদিকে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে শুরু থেকেই প্রচার-প্রচারণার মাঠে জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) নেই। তবে বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ), বরিশাল-৫ ( বরিশাল সদর) ও বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে বাধা-বিপত্তির অভিযোগ ছাড়াই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এরমধ্যে বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না থাকায় জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নাসরিন জাহান রত্না নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি করেই প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অপরদিকে বরিশালের ৬টি আসনেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বেশ চাঙ্গা মনোভাব নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বরিশাল-৩ আসনে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী আতিকুর রহমান ও বরিশাল-৬ আসনে সিংহ প্রতীকের মোহাম্মদ আলী তালুকদার।
সার্বিক বিষয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, নির্বাচনী পরিবেশের মধ্যদিয়ে গোটা জেলার ৬ আসনে সুন্দরভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। বরিশালের সব আসনেই আমরা মহাজোট ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ে আশাবাদী। আমরা প্রত্যাশাকরি আশানুরূপ ফলাফলের মধ্যদিয়ে বিজয় হবে। তিনি বলেন, বিএনপির মধ্যে আত্মকলহ রয়েছে, রয়েছে সমঝোতার অভাব। শুরুতেই বরিশালের সব আসনে তারা ২ জন প্রার্থী দিয়ে এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমার মনে হয়, যেখানে যা ঘটছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই হচ্ছে।
তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কোনো বিষয় নেই বলে জানিয়ে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবা উদ্দিন ফরহাদ বলেন, প্রার্থীসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় নামতে পারছে না। একদিকে পুলিশ গ্রেফতার করছে, অপরদিকে হামলার শিকার হচ্ছে। আমরা সভা-সমাবেশ করতে চাচ্ছি। পুলিশি হয়রানি বন্ধ, ক্ষমতাসীনদের কর্মী বাহিনীর হামলা বন্ধকরাসহ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।
অপরদিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে দেবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের দিন কিভাবে ভোট নেবে, গুণবে তা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন, কিন্তু নির্বাচনের দিন মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসতে পারবে কি না, ভোটদিতে পারবে কি না তা নিয়ে কেউ কাজ করছে না। আমাদের অফিস ভেঙে মামলা দেওয়া হচ্ছে, উঠান বৈঠকে যাওয়া নেতা-কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮
এমএস/এসএইচ