ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ঢাকা-৮

প্রার্থীর ভিড়ে দুই ‘হেভিওয়েটের’ লড়াই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
প্রার্থীর ভিড়ে দুই ‘হেভিওয়েটের’ লড়াই গণসংযোগ করছেন নৌকা প্রতীকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর ব্যাংকপাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নাম করা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়,  সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন। এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে প্রার্থীর আধিক্যও বেশি! 

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে সব চেয়ে বেশি ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই আসনে। তবে দুই জোটের হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভেটারদের অনেকেই।


 
মহাজোটের সমর্থন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। অপরদিকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।  

যদিও নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হয়েছিলেন হাবীব উন নবী সোহেল। এবার তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দেননি, এখন কারাবন্দি বিএনপির এই নেতা।
 
মহাজোটের বিগত ১০ বছরের উন্নয়নযজ্ঞ দেখে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটাররা ফের নৌকা প্রতীকেই সমর্থন দেবে বলে আশা রাশেদ খান মেননের।
 
আর বিএনপির সমর্থকরা মনে করছেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য জনগণ ধানের শীষ প্রতীক বেছে নেবেন।  

প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজ কল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে তার নির্বাচনী এলাকার পুরো অংশ। শুধু মেনন নন, তার সমর্থনে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতা-কর্মীরা।
 
গত ১০ ডিসেম্বর পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে তার প্রথম নির্বাচনী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতিঝিল, শাহজাহানপুর, শাহবাগ, রমনা থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত  ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সহ-সভাপতি আবুল বাশার, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
 
এরপর থেকে রাশেদ খান মেননের সমর্থনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
 
শনিবার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় গণসংযোগ ও মতবিনিময়কালে মেনন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও অগ্রগতির পক্ষে সব সময় ভূমিকা রেখেছে। এখানে সম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের কোন স্থান নেই।  

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অতীত ও ঐতিহ্য অনুয়ায়ী সবসময়ই মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেছে। বাংলদেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপিঠ স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকা রেখেছিল। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে তারা ভোট দিতে ভুল করবে না। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষেই রায় দেবে তারা। ’
 
তবে নিজ দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে বিভিন্ন এলাকাতে গণসংযোগ করছেন মির্জা আব্বাস। গণসংযোগকালে বাধা ও হামলার সম্মুখীন হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন তিনি।
 
মির্জা আব্বাস মতিঝিল ব্যাংক পাড়ায়ও প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে নাকি জনগণকে বন্দি রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, নাকি জনগণকে জিম্মি রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জনগণ যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়, ভোট যদি অবাধ হয়, নিরপেক্ষ হয়, ফিল্ড যেটাই থাকুক বিএনপি জয়লাভ করবে।
 
ভোটের প্রচারপত্রে রাশেদ খান মেননের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা-৮ আসনে জলাবদ্ধতা এখন অতীতের ব্যাপার। বিদ্যুৎ থাকে সব সময়। এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটিতে নতুন ভবন, না হলে চারতলা-দশতলা উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ঘটছে। সব পরীক্ষায় এই এলাকার স্কুলগুলো মেধা তালিকায় শীর্ষে, পাশের হারও শতভাগ। স্থাপিত হয়েছে নয়টি পানির পাম্প।
 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৯, ২০, ২১ নম্বর ওয়ার্ড তথা মগবাজার, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, মতিঝিল, মালিবাগ ও শান্তিনগর এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে।
 
ঢাকা-৮ আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৫২ হাজার ১০৭ জন এবং এক লাখ ১২ হাজার ৭৮৬ জন নারী ভোটার।
 
নয়াপল্টনের বাসিন্দা মো. মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ভোটের পরিবেশ-পরিস্থিতি সুন্দর। সবাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এবার উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। তবে যারাই অংশ নিক না কেন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সে মতেই ভোট দেবো।
 
এদিকে মহাজোটের কাজে সন্তুষ্ট মালিবাগ মোড়ের বাসিন্দা ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, রাশেদ খান মেনন উন্নয়নের জন্য ভোট পাবেন একথা সত্য। টানা ১০ বছর থেকে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তাকে ভোট দেবো। তবে এই আসনে মির্জা আব্বাসের প্রভাবও কম না।  
 
ফকিরাপুল এলাকার কালভার্ট রোডের বাসিন্দা ফরিদ মিয়া বলেন, এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস। মির্জা আব্বাসের প্রভাবও আছে। আবার তিনি প্রচারণাও চালাচ্ছেন কম বেশি। সেই হিসেবে দুই প্রার্থীর লড়াই জমবে।  
 
দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ছাড়াও এই আসনে আছেন- লাঙল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির ইউনুস আলী আকন্দ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবুল কাশেম, মিনার প্রতীক নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের আবু নোমান মোহাম্মদ জিয়াউল হক মজুমদার ও বাঘ প্রতীকে পিডিপির আবুল কালাম আজাদ।
 
এছাড়াও টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ’র আব্দুস সালাম সুজন, মোমবাতি প্রতীকে ইসলামী ফ্রন্টের এসএম সরওয়ার, আম প্রতীকে এনপিপির ছাবের আহাম্মদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের জাকির হোসেন, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির নজরুল ইসলাম লিটন, মই প্রতীকে বাসদের শম্পা বসু, গাভী প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যাপের সুমি আক্তার শিল্পী, পাঞ্জা প্রতীকে বিএমএলের হাসিনা হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
এমআইএইচ/ইএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নির্বাচন ও ইসি এর সর্বশেষ

Veet