সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এক এক করে ছয়টি আসনের প্রার্থী ও এজেন্টদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
প্রথমে সুযোগ দেওয়া হয় রাজশাহী-১ আসনের প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্টদের। শুরুতেই নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ব্যারিস্টার মাহাফুজুর রহমান মিলন।
তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এখানে ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তারা নিয়ম মেনে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকে প্রচার করলেও নৌকার প্রচার মাইক বাজছে গভীর রাত পর্যন্ত। পুলিশও পক্ষপাতিত্ব করছে। একই ধরনের অভিযোগ করেন আসনটির ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আবদুল মান্নানও।
তবে এ আসনের নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এজাজুল হক মানু বলেন, তার প্রার্থীই জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এ জন্য তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সাতজন গানম্যান দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এছাড়া বিএনপি প্রার্থীর বাড়ির এলাকাগুলোতে নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী কার্যালয়ও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু। এ সময় ‘ক্ষমতাসীন দল রাজশাহীতে কয়টি আসন চায় সেটি আমাদের বলে দিন; ওই আসনগুলোতে আমরা ভোট করবো না’ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এমন প্রস্তাব রাখেন মিনু।
তবে মিজানুর রহমান মিনুর এমন প্রস্তাবে বিব্রত বোধ করেন রিটানিং কর্মকর্তা।
মিনু বলেন, নির্বাচনে প্রচারের সময় বেশি থাকায় সহিংস ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সহিংসতা এড়াতে একই পোস্টারে সব প্রার্থীর প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে নির্বাচনের ব্যয়ও কমবে। মিনুর অভিযোগ, বিনা কারণে পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। এতে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন কোন কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আমাদের জানান। আমরা তাদের পুলিশের কাছে নিয়ে গিয়ে তুলে দেবো। এভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করবেন না।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বিএনপি প্রার্থী শফিকুল হক মিলন বলেন, নির্বাচনে দুই উপজেলায় বিভৎস কাণ্ড ঘটছে। নৌকার প্রার্থীর ইঙ্গিতে পুলিশ তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও নওহাটা পৌরসভার মেয়র মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে। পুরনো একটি মামলার অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে তাকে চালান দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের বিএনপি প্রার্থী আবু হেনা বলেন, কয়দিন আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মারামারিতে বাগমারায় একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের একপক্ষ ওসির অপসারণ চেয়েছে। তবুও বাগমারা থানার ওসিকে অপসারণ করা হয়নি। কারণ, তিনি নৌকার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের আস্থাভাজন। ওই ওসি পাঁচ মাস আগে বাগমারার বিএনপি নেতাকর্মীদেরও গ্রেফতারের পরিকল্পনা করেছেন। সে মোতাবেক এখন গ্রেফতার করে যাচ্ছেন।
তবে রাজশাহী-৪ আসনের নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ড. মোসলেহ উদ্দিন দাবি করেছেন, সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। আবু হেনা প্রায় ১০ বছর এলাকায় যাননি। এখন নির্বাচনের সময় ভোট চাইতে যাচ্ছেন। তাই মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়ছেন। এছাড়া আর অন্য কিছু হয়নি সেখানে।
সভায় রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম আবদুল কাদের প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সাধারণ ভোটাররা নিরাপদে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন এবং নিরাপদে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি। আর এজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাই নির্বাচনকে ঘিরে কেউ হুমকি-ধামকি দেবেন না। ভোটের পরে জ্বালাও-পোড়াও করবেন না। কেউ ভুল করবেন না। ভুল করলে খেসারত দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন কিন্তু বসে থাকবে না। আমরা নিরপেক্ষভাবে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই। এ ব্যাপারে সবাই সহায়তা করবেন। কোনোভাবেই দেশটাকে অস্থিতিশীল করা যাবে না বলেও সবাইকে সতর্ক করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
এসএম/টিএ