ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে যেমন নির্বাচন কমিশন তাদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করছে, তেমনি শেষ মুহূর্তে এসে প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি আর নিজের জন্য চাইছেন ভোট।
বরিশালের পরিসংখ্যানে ছয়টি আসনে নতুন ভোটার রয়েছে প্রায় আড়াই লাখের মতো। যা মোট ভোটারের ৭ শতাংশের ১ শতাংশের সমান প্রায়। আর এ নতুন ভোটারকেই প্রার্থীরা তরুণ ভোটার হিসেবে দেখছেন। সে হিসেবে সব আসনেই তরুণ ভোটারদের গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রার্থীরা। আবার তরুণ ভোটারদেরও রয়েছে প্রার্থীদের প্রতি আলাদা চাওয়া-পাওয়া।
তরুণ ভোটারদের মতে, মাদক যেখানে গোটা যুব সমাজকে গ্রাস করে খাচ্ছে, সেখানে এই ভোটের মাঠে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি হওয়া উচিত মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার। পাশাপাশি প্রার্থীদের দেওয়া অন্যান্য সব প্রতিশ্রুতিই যেন মুখের বুলিতে ক্ষ্যান্ত না থাকে, কাজের মধ্য দিয়ে সব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায় বরিশালের তরুণ ভোটাররা।
বরিশালের কাউনিয়া এলাকার সৈয়দ হাতেম আলী কলেজেরছাত্র জিয়াউল হকের মতে,বিগত সময়ে দেখে এসেছেন প্রার্থীদের নানান প্রতিশ্রুতি দিয়েও কাজ না করতে, তাই এবারে কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী প্রার্থীকেই ভোট দেবেন তারা।
তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছেন নির্বাচন এলেই প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে যায়। উন্নয়নের নানান বুলি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়ান। বাস্তবে উন্নয়ন করে একজন আর প্রতিশ্রুতির খাতায় উন্নয়নের জোয়ার দেখান আরেকজন। আমি চাই যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে। আর যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়েই দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের যোগ্য সরকারকে নির্বাচিত করতে। এক কথায় বরিশালের উন্নয়নে ভূয়সী ভূমিকা রাখবে তাকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছি।
আছিয়া আক্তার নামে অপর তরুণী বলেন, প্রার্থী যে দলেরই হোক না কেন, আমরা চাই সে যোগ্যতাসম্পন্ন হোক। আমি এমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই, যে বিগত দিনে যুব সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন এবং সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। পাশাপাশি বেকার সমস্যা নিরসন, বরিশালের অবকাঠামোগতদিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবেন এমন প্রার্থীকেই ভোট দিতে চাই। আর প্রার্থীকে অবশ্যই তার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।
বানারীপাড়ার তেতলা গ্রামের বাসিন্দা আশিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আজ মাদকদ্রব্য শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের যুব সমাজকেও গ্রাস করে ফেলেছে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় নতুন প্রজন্ম গ্রামীণ ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে গুটিয়ে রাখছে। ফলে বাংলার নানান খেলাধুলা-সংস্কৃতির পর্ব হারিয়ে যাচ্ছে। আমি চাই এমন প্রার্থী যে যুব সমাজকে হাতিয়ার নয়, দেশের আগামীর সম্পদ হিসেবে দেখবে এবং যুব সমাজের কথা চিন্তা করে ভবিষ্যত উন্নয়ন অব্যাহত রাখবে।
জাকারিয়া খান নয়ন নামে বাকেরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও নতুন ভোটার জানান, বাকেরগঞ্জের কি অবস্থা সেটা বরিশালের সবাই জানে। নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের দেখা যায়। আরা সারাবছর কোনো খোঁজই থাকে না। কিন্তু আমরা কাজের মানুষ চাই। যে বাকেরগঞ্জের জন্য কাজ করবে।
বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে ২০১৪ ভোটার সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ২৯ হাজার ২৬৪টি, কিন্তু এবারে ভোটার সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮৫ জন। এর মধ্যে বরিশাল ১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে নতুন ভোটার ৩৩ হাজার ৪০ জন, বরিশাল ২ (উজিপুর-বানারীপাড়া) আসনে ৪২ হাজার ৩৪৩ জন, বরিশাল ৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে ৩৬ হাজার ৮০ জন, বরিশাল ৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে ৫১ হাজার ৬২৯ জন, বরিশাল ৫ (সদর) আসনে ৫৫ হাজার ৩৯ জন এবং বরিশাল ৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে ৩১ হাজার ১৯০ জন ভোটার রয়েছে। সব মিলিয়ে বরিশাল জেলায় এবার নতুন ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩২১ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
এমএস/এএটি