একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থেকে শুরু করে ভোটার ও কর্মী- সমর্থকরা সবাই গা ভাসিয়েছেন শেষ দিনের প্রচার প্রচারণায়। শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় প্রচারণার ইতি টানতে হবে প্রার্থীদের।
লাখো কণ্ঠের স্লোগানের প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছিল শহরের অলিগলি ছেড়ে গ্রামের পাড়া-মহল্লার মেঠপথও। প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে শেষবারের মতো আয়োজন করে মিছিল সমাবেশের। কার সমাবেশ মিছিলে কত মানুষ এমন প্রতিযোগিতা ছিল শেষ দিনের প্রচারণার সমাপ্তিতে। বিশেষ করে নৌকার সমাবেশ আর মিছিলগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। সব মানুষ যেন আজ বেরিয়ে পড়েছিলেন ভোটের উৎসবে।
নৌকার অবস্থা যখন এমন, তখন ভোটের মাঠে অনেকটাই নিরুত্তাপ ছিল বিএনপির শেষ দিনের প্রচারণা। মামলার ভারে ভারাক্রান্ত প্রার্থীরা সিদ্ধান্তহীনতা, কর্মী সংকটে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে বিএনপি। রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে শুধুমাত্র সদরে (রাজশাহী-২) বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু কিছুটা হলেও সক্রিয়। বাকি আসনগুলোতে দলটির তৎপরতা এখনও পৌষের মতই শীতল।
শেষ দিনে কোনো আসনেই চোখ ধাঁধানো কোনো প্রচারণাই নজরে আসেনি ভোটারদের। বহস্পতিবার সকালে কেবল গণসংযোগ করেছেন রাজশাহী সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু। মহানগরীর সাহেব বাজার কাপড়পট্টি এলাকায় গণসংযোগ করেছে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
একইদিন শহর কেন্দ্রীক এ আসনের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নৌকার পক্ষে খণ্ড খণ্ড মিছিলে সরগরম হয়ে উঠে। শেষদিনের মিছিলে রাজশাহী মহানগরীতে মহাজোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে শক্ত আওয়াজ দিয়ে চমক দেখানো হয়েছে। বিকেলে রাজশাহী-১৪ দলের সমন্বয়ক ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বে বিশাল শো-ডাউন দেওয়া হয়েছে।
মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট থেকে শুরু হওয়া নৌকার পক্ষের এ মিছিলে হাজারো মানুষ, নারী পুরুষ অংশ নিয়ে নৌকার পক্ষে শেষবারের মত শক্ত আওয়াজ ছড়িয়েছেন পদ্মাপাড়ে।
এদিন বিকেলে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বিশাল শো-ডাউন ও সমাবেশ করেছেন এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। বেলা ৩টায় উপজেলার ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশের আয়োজন করা হলেও দুপুর গড়াতেই বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে হাজার মানুষ আসতে থাকেন সেখানে।
দুপুরের পরই বিশাল জনসমুদ্রে রূপ নেয় বিশাল মাঠ। সেখানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী এনামুল হকসহ আওয়ামী লীগের শীষ নেতারা। বিশাল এ সমাবেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই কয়েক হাজার মানুষ নৌকার স্লোগান মুখে নিয়ে বাদ্যের তালে তালে জনসভাস্থলে উপস্থিত হন। বিশাল এ সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও দলটির সংসদ সদস্য প্রার্থী প্রকৌশলী এনামুল হক।
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী এদিন সকাল থেকে জেলার তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশাল শো-ডাউন দিয়েছেন। এলাকার উন্নয়নে তিনি আবারও নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেছেন। তার শো-ডাউন ও গণসংযোগে সকাল থেকেই মানুষের স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশ নেন।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আয়েন উদ্দিনও শেষ দিনে বিশাল মিছিল করেছেন। প্রচারে মিছিলে সামিল হন হাজারো মানুষ। তিনি নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে শেষবারের মত নৌকার অবস্থার জানান দেন।
রাজশাহী-৫ আসনে সুবিধায় থাকা নতুন প্রার্থী ডা. মনসুর রহমানের পক্ষেও শেষ প্রচারে নামেন সাধারণ মানুষ। বিশাল জনতা শেষ দিনে মাঠে নেমে আবারো নৌকার জয়ে ঐক্যবদ্ধ শপথ করেন। সকাল থেকে দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে শেষবারের মতো মিছিল সমাবেশে অংশ নিয়ে নৌকার শক্তি জানান দিয়েছেন।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে বিএনপি প্রার্থী শূন্য থাকায় জয়ের অপেক্ষায় এখন এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এই আসনে আজ জমজমাট প্রচারণা চালিয়েছেন শাহরিয়ার আলম। চারঘাট-বাঘা এলাকায় শো-ডাউন দিয়েছেন তিনি।
এই আসনে বর্তমানে জাপার নৌকা ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রয়েছেন হাতপাখা প্রতীক নিয়ে। তবে শক্ত প্রার্থী শাহরিয়ার আলম আগে থেকেই মাঠ গুছিয়ে রাখায় তার কর্মীরা এখন তাকে দেখছেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮
এসএস/এমএমএস