ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ভোট দেওয়া নিয়ে ইসলাম কী বলে?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮
ভোট দেওয়া নিয়ে ইসলাম কী বলে? প্রতীকী ছবি

অনেক ধার্মিক ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক ভোট না দেওয়াকেই সঠিক ও শ্রেয় মনে করেন। তাদের কাছে একটি ভুল ধারণা ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ করেছে যে, প্রচলিত রাজনৈতিক নির্বাচন ও ভোট দেওয়ার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কারণ, বর্তমানে যে রাজনীতি প্রচলিত, তাতে ঘুণে ধরেছে। রাজনৈতিক অঙ্গন ধোঁকার প্রবণতা, মিথ্যা ও প্রতারণার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

ধার্মিক ও অভিজাত শ্রেণির লোকজনের কাছে এসব কারণে রাজনীতি করা, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এবং ভোট দেওয়া বৈধ নয়! অনস্বীকার্য যে, এ ধারণার ভিত্তি অবশ্যই ভালো নিয়তের ওপর। কিন্তু এ ধারণা নিঃসন্দেহে ভুল এবং দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

কেননা এ ধারণায় ভিত্তি করে যদি সমাজের ধার্মিক, সৎনিষ্ঠ, ও সচ্চরিত্রের মানুষগুলো রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকলে অসৎ, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, অত্যাচরীরা রাজনীতির ময়দান খালি পেয়ে অব্যবহার করবে। ফলে তাদের নৈরাজ্য গোটা দেশ ও জাতিকে গ্রাস করে নেবে।

ভোট না দেওয়া ‘গুনাহে’র কাজ!
এসব কারণে একজন দ্বীনদার মুসলমান ও সুবোধসম্পন্ন নাগরিকের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য হলো, জালিম ও দুর্নীতিবাজ লোকদের থেকে রাজনীতির উদ্ধার করা। ন্যায়ভিত্তিক ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এ ব্যাপারে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস মহানবী (সা.) বলেন, ‘যদি লোকজন কোনো জালিমকে জুলুম করতে দেখে এবং তা প্রতিরোধ না করে, তাহলে এটা অতি স্বাভাবিক যে মহান আল্লাহ ব্যাপকভাবে সবার ওপর আজাব নাজিল করবেন। যে আজাব থেকে জালিম ও মজলুম কেউ রক্ষা পাবে না। ’

কখনো যদি কাউকে নির্যাতিত হতে দেখেন, আর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে অন্য কোনোভাবে ওই অত্যাচার প্রতিহত করতে আপনি সক্ষম মনে করে থাকেন, তাহলে উপর্যুক্ত হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, আপনার ফরজ হলো চুপচাপ বসে না থেকে সাধ্যমতো অত্যাচারীর জুলুম প্রতিহত করা। (আর যদি সেটা না পারেন, তাহলে তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আপনার একান্ত কর্তব্য। )

ভোট দেওয়া ‘সাক্ষ্য দেওয়া’র সমান
ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট দেওয়া হলো সাক্ষ্য দেওয়ার সমপর্যায়ের। দু’টি একই রকমের বিধান। সুতরাং শরিয়তের দৃষ্টিতে যেভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া হারাম, তেমনিভাবে প্রয়োজনের সময় সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকা বা তা লুকানোও হারাম। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘এবং তোমরা সাক্ষ্য গোপন কোরো না। যে ব্যক্তি তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। ’ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ২৮৩)

আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তিকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়, অতঃপর সে ওই সাক্ষ্য গোপন রাখে, তাহলে সে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী বলে গণ্য হবে। ভোট প্রদান করাও যেহেতু সাক্ষ্য প্রদান করারই নামান্তর। ’ (সূত্র: জামউল ফাওয়ায়েদ। খণ্ড: ২, পৃ: ৬২)

তাই কোরআন ও হাদিসে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিধান রয়েছে, তা ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। সুতরাং ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা কখনোই দ্বীনদার ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। বরং ভোটকে সঠিক পন্থায় প্রয়োগ করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ।

একটু চিন্তা করা উচিত, সমাজের সৎ-নিষ্ঠাবান, যোগ্য-সৎ, আল্লাহভীরু ও চরিত্রবান লোকগুলো যদি নির্বাচনের সব কর্মকাণ্ড থেকে দূরত্ব বজিয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচনের সারাটা অঙ্গন সমাজ ও দেশের অসৎ, দুর্নীতিবাজ, অত্যাচারী লোকদের কাছে ক্ষত-বিক্ষত হবে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।

-প্রচলিত নির্বাচনবিষয়ক তার একটি প্রবন্ধ থেকে অনূদিত নির্বাচিত অংশ।

লেখক, স্থায়ী সদস্য ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিকাহ একাডেমি, জেদ্দা, সৌদি আরব

বাংলানিউজের ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮
এমএমইউ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নির্বাচন ও ইসি এর সর্বশেষ