সর্বশেষ খবর অনুযায়ী শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে সাতক্ষীরা-৪ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য স ম জগলুল হায়দারের পরিবর্তে বিকল্পধারার কুলা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এইচএম গোলাম রেজাকে সমর্থন নেওয়ার জন্য শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে কুলা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য তারা স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের এ বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাতক্ষীরা-৪ আসনে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য স ম জগলুল হায়দার, ধানের শীষ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য জামায়াত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম, বিকল্পধারার কুলা প্রতীক নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য এইচএম গোলাম রেজা, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আব্দুস সাত্তার মোড়ল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীক নিয়ে আব্দুল করিম ও বাঘ প্রতীক নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের রবিউল ইসলাম জোয়ারদার।
এর মধ্যে মহাজোটে একক প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় দলীয় নেতা-কর্মীরা। প্রথমেই ঘরে ফেরেন মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির আব্দুস সাত্তার মোড়ল। এরপর শুরু হয় বিকল্পধারা ও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের লড়াই। নিজেদের মধ্যে প্রতিনিয়ত চলছিল সংঘর্ষ ও হামলা-মামলা। এসবের মধ্যে যতই নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছে বিকল্পধারার গোলাম রেজার সমর্থন ততই বাড়ছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানায়, জগলুল হায়দারের সাজানো বাগান নষ্ট করে দিয়েছে শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি একরামুল হক লায়েছ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সুজন, সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান, বাদাঘাটা কিং স্টার ক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সদস্য নাছিম, সাবেক ইউপি সদস্য হাসিম, হেলাল, সাদিকসহ কয়েকজন।
জগলুল হায়দারের আশ্রয়ে থেকে তারা মাদক, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, শ্লীলতাহানি, ঘের (চিংড়ি চাষের পুকুর) দখল, নিরীহ মানুষকে মারধর, চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সাধারণ মানুষ তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আবার জগলুল হায়দার সবকিছুই দেখে না দেখার মতো থাকতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি সব সময় ফেসবুকে ছবি দিতে ব্যস্ত থাকতেন। তার কাজ ছিল মানুষকে ডাব খাইয়ে বা রাত ১২টায় যেকোনো বাড়ি গিয়ে মুরগি নিয়ে উপস্থিত হয়ে ও এসব ছবি ফেসবুকে দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা। স্থানীয় জনগণ এসব নিয়েও বিরক্ত ছিল। একইসঙ্গে নির্বাচনী এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও শেষ সময়ে এসে তার বিরুদ্ধে ফুসে ওঠে।
শুক্রবার রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্যামনগরে এইচএম গোলাম রেজার বাড়িতে তাকে সমর্থন দিয়ে বৈঠকে মিলিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফরুল আলম বাবু, শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আতাউল হক দোলন, সহ-সভাপতি আনিছুজ্জামান, শফিউল আযম লেলিনসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
অন্যদিকে, চেষ্টা করেও স ম জগলুল হায়দারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে, ফেসবুকে তার পেজগুলোতে তাকেই মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আতাউল হক দোলন বাংলানিউজকে বলেন, ধানের শীষের প্রার্থীকে পরাজিত করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সাতক্ষীরা-৪ আসন উপহার দিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাপের মুখে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানে সবাই কুলা প্রতীকের পক্ষে কাজ করবে এবং কুলা প্রতীকেই ভোট দেবে।
তার কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, কিছুই করার নেই। যার পাল্লা ভারী তাকে জিতিয়েই এ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা গাজী নজরুলকে বিতাড়িত করা হবে। দলের সবাই কুলা প্রতীকে ভোট দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮
ওএইচ/