ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে সব নির্বাচনী উপকরণ পাঠিয়েছে দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলের মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাবে ব্যালট পেপারসহ সকল উপকরণ।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, পোলিং অফিসাররা সকাল ৮টার আগেই প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নিয়োগপত্র দেখাবেন। এসব বিষয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) প্রথমে ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর এ নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করেন। এ হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ছিল ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার হয় ৯ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর।
সচিব বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ৩০০ আসনের মধ্যে একজন প্রার্থীর মধ্যে মৃত্যুজনিত কারণে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এক প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে স্থগিত হওয়া গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে ২৭ জানুয়ারি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবার ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।
সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রের ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি ভোটকক্ষে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন।
এবার ইসির নিবন্ধনে থাকা ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবগুলোই অংশ নিচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ২৯৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৬১ জন। এরমধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে রয়েছেন ১২৮ জন।
ভোটকেন্দ্র এবং নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত ফোর্স সংখ্যা- প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার। এর মধ্যে পুলিশ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার আনসার প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার, গ্রাম পুলিশ প্রায় ৪১ হাজার।
৩৮৯টি উপজেলায় ৪১৪ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) সেনা, ১৮টি উপলায় ৪৮ প্লাটুন নৌসেনা, ১২ উপজেলায় ৪২ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) কোস্টগার্ড সদস্য, বিজিবি ৯৮৩ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন), র্যাব প্রায় ৬০০ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ভোটের মাঠে নিয়োজিত আছে।
এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা (র্যাবসহ) প্রায় ২ হাজার প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার)। সারাদেশে জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের টহল দলও নিয়োজিত আছে ভোটের জন্য।
এছাড়া গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে আছেন। সবমিলিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৮ লাখ ফোর্স মোতায়েন থাকবে।
ভোটের দায়িত্বে ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচনী কর্মকর্তা
নির্বাচনে ১ হাজার ৩২৮ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৬৫২ জন, অবশিষ্ট ৬৭৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৬৪০ জন, ১২২টি ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে ২৪৪ জন, প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ৪০ হাজার ১৮৩ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন।
যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
শনিবার দিনগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ভোটের দিন দিনগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত বেবি ট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ ভ্যান, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ স্থানীয় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নৌযান চলাচলের ওপর।
এছাড়া ভোটকে সামনে রেখে শুক্রবার দিনগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ১ জানুয়ারি দিনগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত মোট চার দিন সারাদেশে মোটরসাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক ও কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদির কাজে নিয়োজিত যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
এছাড়া মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক
দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ পর্যবেক্ষক এবার ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। আর ফেম্বোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ৩৮ জন, কূটনৈতিক/বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশস্থ দূতাবাস/হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন বাংলাদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
ইভিএমের ৬ আসন
ঢাকা-৬: এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। মোট ভোটার ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৩ হাজার ১০৭ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ২০৮ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯৮টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৬৩৮টি।
ঢাকা-১৩: প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ১৬৮ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৪টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭০টি।
রংপুর-৩: প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৯ জন। মোট ভোটার ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২১ হাজার ১০৯ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৫৬২ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৫টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ২৩টি।
খুলনা-২: প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন। মোট ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ১১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৫ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭২০টি।
সাতক্ষীরা-২: প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৬ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৮ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৮ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭৪টি।
চট্টগ্রাম-৯: প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪ হাজার ২০৬ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ২২৫ জন। ভোটকেন্দ্রে সংখ্যা ১৪০টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯২০টি।
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে একক প্রার্থী থাকায় দেশের অর্ধেক মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাননি। এবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধনে থাকা সব দল অংশগ্রহণ করছে এবং ৩০০ আসনের প্রত্যেকটিতে একাধিক প্রার্থী থাকছে বিধায় দেশের সব মানুষই ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮
ইইউডি/এইচএ/