বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারার আনন্দে আত্মহারা দেশের সর্ববৃহৎ ছিটমহল কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়াসহ ১১১টি ছিটমহলের মানুষগুলো। হাট-বাজার, চায়ের দোকান সর্বত্রই চলা ভোটের আলোচনায় উঠে আসছে ছিটবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নের কথা।
রোববার (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যান্য ভোটারের সঙ্গে ভোট প্রয়োগ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পারার আনন্দ দাসিয়ারছড়ার নতুন ভোটারদের মধ্যে।
২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট মধ্যরাতে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের পর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড় জেলার ১১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের ৩৭ হাজার ২৬৯ জন মানুষ।
ছিটমহলগুলোতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রায় ২২ হাজার মানুষ। এর মধ্যে দেশের সর্ববৃহৎ কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় ভোটারের সংখ্যা ৩ হাজার ১৭২ জন।
কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় ছোট ছোট হাট-বাজারে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেখা গেছে আলোচনার ঝড়। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর এ সরকারের বিভিন্নমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়েও আলোচনায় মুখর বিলুপ্ত ছিটবাসীরা। যেন উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে দাসিয়ার ছড়ার সর্বত্র।
দাসিয়ারছড়ার তরুণ ভোটার সুফিয়া বেগম (২০), পাপরি আক্তার (২২), জাকির হোসেন (২১) বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন অন্ধকারে থাকার পর আলোর পথে ফিরে এসেছি। এটা শুধু সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও তার কন্যা শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। নতুন ভোটার হওয়ার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জীবনের প্রথম ভোট প্রয়োগ করে দেশের সরকার নির্বাচন করতে পারবো এটা অনেক গর্বের পাওয়া নাগরিক অধিকার।
দাসিয়ারছড়ার সমন্বয়পাড়া গ্রামের সাবেক পঞ্চায়েত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম (৬৫), আলতাফ হোসেন (৪৫) বাংলানিউজকে বলেন, জীবনে এ প্রথম বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবো। এ যেন হাতের কাছে চাঁদ পাওয়ার মতো আনন্দ। দীর্ঘ ৬৮ বছর ছিটের পার্শ্ববর্তী লোকজনদের ভোট দিতে যাওয়া দেখলেও আমরা ভোট দিতে পারিনি। এবার সেই আশা পূরণে পরিবার-পরিজনসহ অন্যান্যদের সঙ্গে সমান অধিকার নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে।
দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দা নুরুন্নাহার বেগম (৬৫) বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো অধিকারহীন ভারতের নাগরিক ছিলাম। আমরা কখনও বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারবো সেটা ভাবতেই পারিনি। কিন্তু বর্তমান সরকার ছিট বিনিময়ের পর আমাদের সব ছিটবাসীকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছে। আমরা এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবো এবং নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো, এর চেয়ে খুশির বিষয় আর কিছু নেই।
ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের নেতা গোলাম মোস্তফা খান বাংলানিউজকে বলেন, ৬৮ বছর আমাদের কোন নাগরিত্ব বা নাগরিক অধিকার বলে কিছুই ছিল না। ছিটমহল বিনিময় বিলটি বাংলাদেশের সংসদে পাস করে এবং একইভাবে ভারতের সংসদেও বিলটি পাস হওয়ায় আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। এটি আমাদের গর্ব ও অহংকার। যে সংসদের মাধ্যমে আমরা র্দীঘ ৬৮ বছর পর মুক্তি পেয়েছি, সেই সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারছি এটা অনেক আনন্দ-উদ্দীপনার বিষয়। ছিট বিনিময়ের পর থেকে সরকারি নানামুখী কর্মসূচির আওতায় দেশের উন্নয়নে মূল ধারায় একীভূত হওয়া এসব মানুষের আশা নির্বাচিত নতুন সরকার তাদের এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে।
কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটাররা যাতে নিবিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৫টি ভোটকেন্দ্রে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার মোট ৩ হাজার ১৭২ জন ভোটার এ প্রথম সংসদ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ হাজার ৫৯০ জন ও নারী ভোটার ১ হাজার ৮২ জন। দাসিয়ারছড়াবাসীরা পাঁচটি ভোট কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কেন্দ্রগুলো হলো- ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের পশ্চিম কুটি-চন্দ্রখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চন্দ্রখান উচ্চ বিদ্যালয়, চন্দ্রখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের আটিয়াবাড়ী ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাশিপুর উইনিয়নের ছড়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘন্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮
এফইএস/এসএইচ