কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে উচ্চারণ করলেন- ‘বিসমিল্লাহ করে ব্যালট ফেলেছি। ইনশাল্লাহ আল্লাহ রহম করবে।
ময়মনসিংহ নগরীর রাধা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিয়ে এভাবেই নিজের প্রথম কথা জানালেন ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের মহাজোট প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
রোববার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে ভোট দিতে এখানে আসেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও নিজ দল জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের কড়া বেস্টনীর মধ্যে দিয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে পৌঁছলে মুহুমুর্হু স্লোগানে স্বাগত জানানো হয় রওশন এরশাদকে। মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের পর ভোটকক্ষে দায়িত্বরত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নারীদের গালে হাত দিয়ে আদরমাখা পরশ বুলিয়ে দেন।
ভোটকক্ষ থেকে বেরিয়ে সামনেই দাঁড়ানো নারী ভোটারদের লাইনে গিয়েও কথা বলেন। তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি একইভাবে অনেক ভোটারকে আশীর্বাদও করেন ‘পল্লীমাতা’ উপাধির বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী এই রাজনীতিক।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে অপেক্ষমান সংবাদকর্মীদের সঙ্গেও খোশ মেজাজেই কথা বলেন ‘আত্মবিশ্বাসী’ রওশন। ভোট কেমন হচ্ছে সংবাদকর্মীদের এমন প্রশ্নে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েন মহাজোটের এই প্রার্থী।
এই সময় সংবাদকর্মীরা ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে এমন মত উপস্থাপন করলে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ভালো, সুন্দর, শান্ত ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে ভোট দিতে এসেছে। ভোটাররা ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়েছে। ’
রওশন এরশাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নিজের জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী এবং কী কারণে ভোটাররা আপনাকে ভোট দিচ্ছে এবং দেবে এমন প্রশ্নে সরল রওশন এরশাদের বিনয়ী জবাব- ‘মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। আমিও আশাবাদী জয়ের ব্যাপারে। ’
বলতে থাকেন, ‘আমি ময়মনসিংহের মেয়ে। ময়মনসিংহের উন্নয়নে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে এনেছি। এই বিভাগ বাস্তবায়নের পথে, একের পর এক কর্মকান্ড চলছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন হয়েছে। ব্রক্ষপুত্র ব্যারেজের কাজের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা এনেছি।
শহর উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের জন্য স্পেশাল ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে। এতে করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হরে এখানে বেকারের সংখ্যা অনেক কমে যাবে।
কথা প্রসঙ্গে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সমীক্ষা টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ১০ কোটি ৪০ লাখ লোক আছে। তাঁর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান আছে। বাদ বাকী ৫ কোটি লোকের কর্মসংস্থান নেই। সেই কথা চিন্তা করে আমি জমি অধিগ্রহণ করে স্পেশাল ইকোনমিক জোন করার চেষ্টা করছি। শম্ভুগঞ্জ জুট মিল পুরোপুরি চালু হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ’
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদের কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে তাঁর এজেন্টদের বের করে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে রওশন বলেন, ‘কিছু না কিছু জায়গায় বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটতেই পারে। তাঁর (ওয়াহাবের) অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে। ’
ভোটের ফল যাই হোক না কেন, আপনি মেনে নেবেন কীনা সংবাদকর্মীদের সোজাসাপ্টা প্রশ্নে নিজের দৃঢ়তার কথা জানিয়েই পুনরায় আশাবাদী মানসিকতার বিষয়টিই উপস্থাপন করেন। বলেন, ‘রেজাল্ট আমি সব সময় মেনে নিয়েছি এবং যা হবে মেনে নেবো। আমি আশাবাদী। কারণ মানুষ আশা করে। এবং আশা নিয়েই কাজ করে। ’
পরে এই ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে নগরীর কালিবাড়ি প্রি-ক্যাডেট হাই স্কুলের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ সময় ১৪২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮
এমএএএম/এএটি