ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

স্থগিত ২৯ ভোটকেন্দ্রে কী অনিয়ম হয়েছিল?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮
স্থগিত ২৯ ভোটকেন্দ্রে কী অনিয়ম হয়েছিল? ইসি ভবন

ঢাকা: একাদশ সংসদ নির্বাচনে রোববার (৩০ ডিসেম্বর) ভোটগ্রহণের সময় সংঘাত, সহিংসতাসহ ব্যালট পেপার ছিনতাই ও বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে ২৯টি ভোটকেন্দ্র স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৯৯টি আসনের ৪০ হাজার ২শ মতো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন।

কেন্দ্রগুলো স্থগিত করার প্রতিবেদন থেকে জানাগেছে, বেশিরভাগ কেন্দ্রই ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাই, সহিংসতা এবং আরও বেশকিছু বিচ্ছন্ন ঘটনার কারণে স্থগিত করা হয়।  এছাড়াও দুই একটি হতাহতের ঘটনাও রয়েছে।

রংপুর-২ আসনে  কালীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং কতিপয় দুষ্কৃতকারী কর্তৃক জালভোট  দেওয়ার প্রচেষ্টায় কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে চারটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রেগুলো  তেররশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজগন্নাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং  চার হাসানপুর সরকারি প্রাথমিক  বিদ্যালয়। ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে।

শেরপুর-১ আসনে দু’টি কেন্দ্রে দুষ্কৃতিকারীরা অস্ত্র ও লাঠিপেটা নিয়ে আক্রমণ করে ভোটকেন্দ্রে দখলের চেষ্টা  করে। তারা ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে। পরিস্থিতি প্রিজাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। তাই ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রগুলো হলো জামিয়া আরাবিয়া তালিমুননেছা মহিলা মাদ্রাসা এবং সাহাব্দিরচর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নরসিংদী-৩ আসনে  কোন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ায় এবং ৬টি ব্যালট বাক্স ছিনতাই হওয়ায় ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে দু’টি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্র দু’টি ধানতলিয়া সরকারি প্রাথমিক  বিদ্যালয় এবং কোয়রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে প্রিজাইডিং অফিসার  তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। কেন্দ্রগুলো হলো যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সোহাগপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হওয়ায় দুপুর ১টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়।

কুমিল্লা-১ আসনে ভেলানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রটিতে ৫টি ব্যালট বাক্স ভাঙচুর এবং ব্যালট পেপার ছিনতাই হওয়ায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

কুমিল্লা-৭ আসনে পশ্চিম বেলাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র স্থগিত হয়। ব্যালট বাক্স ছিনতাই এবং ভাঙচুর হয়। ব্যালচ বাক্স ছিনতাইকালে একজন ছিনতাইকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।

কুমিল্লা-৮ আসনে আড্ডা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অপ্রীতিকির ঘটনা ঘটার কারণে কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়।

কুমিল্লা-১০ আসনে বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে দুষ্কৃতিকারীরা প্রায় ১৮০০ ব্যালট পেপার  আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

চাঁদপুর-৫ আসনে দক্ষিণ বড়কুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ব্যালট পেপার চুরি হওয়ায় ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।  

নোয়াখালী-১ আসনে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়। কেন্দ্রগুলো হলো কেগনা নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নওয়াবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়।  

নোয়াখালী-২ আসনে মধ্য নাটেশ্বর ইসলামিয়া এবতেদায়ী নুরানী দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রেটিতে দুষ্কৃতকারী কর্তৃক প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পুলিশসহ মোট ৭ থেকে ৮ জন আহত হওয়ায় ঘটনা ঘটায় ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়।  

নোয়াখালী-৩ আসনে চারটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট বাক্স এবং নির্বাচনী মালামাল ছিনতাইয়ের কারণে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রগুলো হলো খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য নরোত্তমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব বাবুনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে কারাড়াই মাদ্রাসায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই হওয়ার কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে কলাউড়া দারুস সুন্নাহ কাসিমিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্র্রটিতে ভোটগ্রহণ বন্ধ আছে।

কক্সবাজার-১ আসনে মাতবর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে ভোটকেন্দ্রর বাইরে দু’পক্ষের সংর্ঘষে ছুরিকাঘাতে আব্দুল্লাহ আল ফারুক নামে একজন মৃত্যুবরণ করে।

চট্টগ্রাম-১০ আসনে শহীদনগর সিটি করপোরেশন সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণে অনিয়ম থাকায় ভোট স্থগিত করে বাধ্য হয় প্রিজাইডিং অফিসার।

রাঙ্গামাটি একটি কেন্দ্রটিতে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে ঘাগড়া ইউনিয়ানাধীন রাঙ্গীপাড়ায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১০ থেকে ১২ জন কর্মী আহত হয়। গুরুতর আহত ২ জনের মধ্যে ঘাগড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বশিরউদ্দিন মৃত্যুবরণ করে।

ইসি সচিব ভোটগ্রহণ শেষে রোববার রাতে জানিয়েছেন, দেশে ভোট উৎসব হয়ে গেল। সারাদেশে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এগুলো কমিশনের নজরে এসেছে। এ সহিংস ঘটনার প্রত্যেকটি বিষয় তদন্ত করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন জানান সচিব।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮
ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।