ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

প্রস্তুতি সম্পন্ন, ইভিএমে বড় ভোট শনিবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০
প্রস্তুতি সম্পন্ন, ইভিএমে বড় ভোট শনিবার

ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 

প্রথমবারের মতো ঢাকার দুই সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) একযোগে ভোট নেবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। ভোটার সংখ্যা এবং যেকোনো বিবেচনায় এটি-ই এখন পর্যন্ত ইভিএমে সবচেয়ে বড় নির্বাচন।


 
নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ নয়টি দলের ১৩ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া কাউন্সিলর পদে প্রায় সাড়ে সাতশ’ প্রার্থী রয়েছে ভোটের মাঠে। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ভোটের প্রচারণা। ভোটের ফলাফল গেজেটে আকারে প্রকাশ পর্যন্ত কোনো প্রকার মিছিল, মশাল মিছিল, মোটরসাইকেল মিছিল, শোডাউন করা যাবে না। বাইক বন্ধ থাকবে ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আর সব যন্ত্রযান বন্ধ থাকবে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ৬টা পর্যন্ত।
 
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানায়, ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ছয়জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন অর্থাৎ তিন পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৩৩৪ জন।
 
মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বিএনপির তাবিথ আউয়াল, আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ, পিডিপির শাহীন খান, এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ডা. আহম্মেদ সাজ্জাদুল হক রুবেল।
 
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে (ডিএসসিসি) মেয়র পদে সাতজন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮২ জন অর্থাৎ ৪২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে।
 
মেয়র পদে সাত প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির (জাপা)  মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান, এনপিপির বাহরানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা ও গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন।
 
প্রভাব ফেলবে নারী ও তরুণ ভোটার:
এবারের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে নারী ও তরুণ ভোটার। তাদের সিদ্ধান্ত যার পাল্লায় পড়বে, সেই উড়াবেন বিজয়ের পতাকা।
 
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুই সিটিতে মোট ভোটার ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন ভোটার রয়েছে।
 
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনের সময় দুই সিটিতে ভোটার ছিল ৪২ লাখ ১৬ হাজার ১২৭ জন। পাঁচবছরে ভোটার বেড়েছে ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪০ জন। অর্থাৎ এক পঞ্চমাংশের বেশি ভোটার হচ্ছে তরুণ ভোটার। এদিকে দুই সিটিতে নারী ভোটার হচ্ছে ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন।
 
ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন- ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার রয়েছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। যাদের মধ্যে নারী ভোটার ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।
 
আইন-শৃঙ্খলা:
ভোটের মাঠে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবির অর্ধ লক্ষ ফোর্স মোতয়েন রেখেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের পরেও মাঠে থাকবে তারা। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত করা হয়েছে ৪২ হাজার ফোর্স। এর মধ্যে সাধারণ কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর ১৬ জন করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে ফোর্স মোতায়েন থাকবে।

নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন ও অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪ জন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।
 
এছাড়া উত্তর সিটিতে ২৭ জন ও দক্ষিণে ৩৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।
 
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন ভবনে নিয়োজিত থাকবে একটি উচ্চপর্যায়ের টিম। ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলামের ইসলামের নেতৃত্বে এই টিম সার্বক্ষণিক কড়া নজরদারিতে রাখবে পুরো নির্বাচনী মাঠ। কমিশনের সঙ্গে তারা আলোচনা করে মাঠ পর্যায়ের সব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবস্থা নেবে।
 
ইভিএম:
২০১০ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন শুরু হলেও সেটা এসে থেকে যায় ২০১৫ সালে। এরপর ২০১৭ সালে অধিকতর উন্নতমানের ইভিএম তৈরির সিদ্ধান্ত এগিয়ে নিয়ে বড় পরিসরে এই যন্ত্র ব্যবহারের দিকে যায় সংস্থাটি।
 
দুই সিটির ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্রের ১৪ হাজার ৪৩৪ টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি ভোটকক্ষের জন্য একটি এবং একটি অতিরিক্ত ইভিএম রাখা হয়েছে ভোটের জন্য। ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক জানান, নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৪৫ হাজার ৭৭০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে  প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।  

এছাড়াও  প্রত্যেক কেন্দ্রে দুইজন করে ৫ হাজার ১৫ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিমান বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। তার কারিগরি সহায়তা করবে।
 
কল সেন্টার, অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে ভোটকেন্দ্র:
ভোটারদের নিজের ভোটকেন্দ্র খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে তিন উপায়ে ভোটার নম্বর ও ভোটকেন্দ্রের নাম জানাবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে কল সেন্টারে বিনা খরচে কল করে ও মেসেজ পাঠিয়ে জানা যাবে চাহিদা মতো তথ্য।
 
অ্যাপটি ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন
 
নির্বাচন কমিশনের কল সেন্টার ১০৫ এ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কল করে ভোটাররা ভোট কেন্দ্র সম্পর্কে জানা যাবে। আবার একজন ভোটার নিজ ভোট কেন্দ্র খুঁজে পেতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ‘PC NID নম্বর’ লিখে ১০৫-এ প্রেরণ করলে ফিরতি এসএমএসে ভোটারের কাঙ্খিত ভোট কেন্দ্রের নাম ও ভোটার নম্বর পেয়ে যাবেন। (PC1234567890 Send to 105)।
 
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়েও ভোটাগণ তাদের ভোট কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে পারবেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং এর ওয়েবসাইটে ঢুকে ভোট কেন্দ্র ও ভোটার নম্বর সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে।
 
আইন লঙ্ঘন করলে শাস্তি:
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয়মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। আর দল বা দলের পক্ষে কোনো প্রতিষ্ঠান বিধিমালা লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। এছাড়া কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্বাচনের পরেও সেই প্রার্থীর প্রার্থিতাও সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
 
আইন অনুযায়ী, এইসব বিধিমালা প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
 
এছাড়া ভোটে তাৎক্ষণিক আদালত বসিয়ে ফোজদারি অপরাধের বিচার করবেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা। আবার বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তা মামলা হবে।
 
বাজেট:
এবারের নির্বাচনেও ২০১৫ সালের নির্বাচনের মতো ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেক ব্যয় হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাছে। নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় হবে বাকি অর্ধেক।

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক:
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশীয় ২২ সংস্থার ১ হাজার ১৩ জন পর্যবেক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। আর নয়টি দেশ ও একটি বিদেশি সংস্থার ৭৪ জন পর্যবেক্ষণ করবেন নির্বাচন। বিদেশি দেশ ও সংস্থায় কর্মরত ২৮ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। বাকিরা বিদেশি।  

বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রসঙ্গে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশনে কর্মরত বাংলাদেশিরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন না।  

তবে সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ও ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, তারা (বাংলাদেশি) বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনে চাকরি করলেও দেশীয় পর্যবেক্ষকদের মতো নীতিমালা অনুসরণ করেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।  
 
২০১৫ সালে বিভক্ত ঢাকার দুই সিটির প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২০ 
ইইউডি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।