ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ঢাকা সিটি নির্বাচন: সংঘর্ষ-অভিযোগ-ইভিএম ও হরতাল

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০
ঢাকা সিটি নির্বাচন: সংঘর্ষ-অভিযোগ-ইভিএম ও হরতাল

ঢাকা: সংঘর্ষ, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ও হরতাল ঘোষণার মধ্যদিয়ে শেষ হলো ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন। দুই মেয়র পদে ভোট গণনার কাজ শেষ, চলছে কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের ভোট গণনা। এরপর হবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।

দিনভর এমনই নানান সব ঘটনা থাকছে এ প্রতিবেদনে...

চার মেয়র প্রার্থীর ভোট প্রদান
দিনের শুরুর দিকেই নিজেদের জন্য নির্ধারিত ভোট কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের প্রধান চার প্রতিদ্বন্দ্বী। উত্তরায় উত্তরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং ধানমণ্ডিতে শেখ ফজলে নূর তাপস ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

অন্যদিকে উত্তরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল গুলশানে এবং দক্ষিণে ইশরাক হোসেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন গোপীবাগে। এছাড়াও ধানমন্ডির সিটি কলেজ কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং উত্তরায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ কে এম নূরুল হুদা স্ব-স্ব ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

পুলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ
ঘড়িতে সকাল ৮টা বেজে ওঠার আগেই ভোট কেন্দ্র থেকে পুলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া হচ্ছে বা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ আনতে শুরু করেন উত্তর ও দক্ষিণে বিএনপি এবং অন্য বিরোধী দলগুলোর সমর্থিত প্রার্থীরা। উত্তরায় নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে এক নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন এমন অভিযোগ আনেন। একই কেন্দ্রে আতিকুল ইসলাম ভোট দিতে এলে তাকেও জানান সেই অভিযোগ।

সংঘর্ষ, হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর বিশেষ করে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে একাধিক কেন্দ্রে। উত্তরে ২ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লবীতে মহিলা ডিগ্রি কলেজ, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দারুস সালামে বাঘবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আসমা বিদ্যানিকেতন, সিদ্ধার্থ হাই স্কুল কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বশির উদ্দিন স্কুল কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীসহ চার জন্য গুরুতর আহত হন।

এছাড়াও দক্ষিণে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড আওতাধীন গেন্ডারিয়ার বিপিন রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সাদুর নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও শেষ সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মালিবাগ আবুজহর গিফরি কলেজ কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেছেন দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা। তাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই কাউন্সিলর প্রার্থীদের একজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত গোলাম আশরাফ তালুকদার। আরেকজন এ দলেরই বিদ্রোহী মামুম রশিদ শুভ্র।

সাংবাদিকদের ওপর হামলা
ভোটের উত্তেজনা থেকে রেহাই পাননি পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকা সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীরাও। উত্তরে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের রামদার কোপে গুরুতর আহত হয়েছেন আগামী নিউজের সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান। দক্ষিণ ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওতাধীন মাদার টেক কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হন দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান ফটোসাংবাদিক শেখ হাসান। কেড়ে নেওয়া হয় তার ক্যামেরার মেমরি কার্ডও। এছাড়াও আরও কিছু স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিকে পক্ষ থেকে।

অবশ্য সাংবাদিকদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন র‍্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

ইভিএম অভিজ্ঞতা
সম্পূর্ণ ইভিএম মেশিনে প্রথমবারের মতো ভোট হল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে। ভোটারদের মধ্যে এর অভিজ্ঞতা নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারও জন্য ইভিএম ইতিবাচক অভিজ্ঞতা দিলেও কারও কারও হয়েছে ভোট দিতে সমস্যা। বিশেষ করে মেশিনের মূল অংশে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ভোটারদের। এ বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাননি খোদ সিইসি। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভোট দিতে হয় তাকে। এছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠান ড. জাফরউল্লাহ এবং প্রবীণ আইনজীবী ড. কামালের মতো নাগরিকেরা পড়েছিলেন ইভিএম বিড়ম্বনায়।

হরতাল
যেমন-তেমন করে ভোটগ্রহণ শেষ হলেও দুই মেয়র পদে ফলাফল ঘোষণার পরপরই প্রধান বিরোধীদল বিএনপির পক্ষ থেকে আসে হরতালের ঘোষণা। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। অবশ্য এই হরতালেও গণপরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে জানিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। অন্যদিকে জনস্বার্থ বিরোধী যেকোন সিদ্ধান্ত শক্ত হাতে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিজয়ী দুই মেয়র যা বললেন
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার বেশ খানিক আগেই নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ঢাকার উত্তরে মেয়র পদে বিজয়ী আতিকুল ইসলাম। নিজ প্রতিক্রিয়ায় নগরবাসীকে তার প্রতি আস্থা রাখার আহবান জানিয়ে সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলবেন বলে জানান আতিক। অন্যদিকে দক্ষিণে বিজয়ী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পেরেছে। ঢাকাবাসীকেও ধন্যবাদ নৌকার পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এসএইচএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।