ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

এনআইডি জালিয়াতি ঠেকাতে উচ্চ পর্যায়ের কারিগরি কমিটি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২০
এনআইডি জালিয়াতি ঠেকাতে উচ্চ পর্যায়ের কারিগরি কমিটি

ঢাকা: মিথ্যা তথ্য দিয়ে একাধিকবার ভোটার হওয়া কিংবা তথ্য সংশোধন করা ঠেকাতে প্রথমবারের মতো উচ্চ পর্যায়ে কারিগরি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ডা. সাবরিনার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির পর কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিল।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, দ্বৈত ভোটার হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। অনেকেই ভুল তথ্য দিয়ে এনআইডি পাওয়ার পর সংশোধনের ঝামেলা এড়াতে নতুন ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেন। আর এ উদ্দেশ্যকে নির্বাচন কমিশন ‘সরল বিশ্বাসের’ ভুল বলে মনে করে। তবে কেউ কেউ অসৎ উদ্দেশ্যেও দ্বৈত ভোটার হওয়ার অপরাধটি করেন।

এছাড়া ২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার মাধ্যমে এনআইডি কার্যক্রম শুরু হলে অনেকের এনআইডিতেই বিভিন্ন করণিক ভুল চলে আসে। আর এই ভুল সংশোধন সময়সাপেক্ষ হওয়ায় অনেকেই দ্বৈত ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে সফল হন। কিন্তু ২০১৬ সালে দশ আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া শুরু করলে অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায় এই প্রচেষ্টা। কেননা, ভোটার হতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ ম্যাচ করে দেখা হয় যে ওই ব্যক্তি পূর্বে ভোটার হয়েছিলেন কি-না। আগে যখন চার আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হতো, তখন অনেকেই আঙ্গুলের ছাপ পরবর্তীতে ম্যাচ না করায় দ্বৈত ভোটার হওয়ার সুযোগ থেকে যেত। কিন্তু বর্তমানে দশ আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ায় সে সুযোগ থাকার কথা নয়। তবু সেটা ঘটছে এবং অনেক অপরাধীরা এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে। তাই এবার নড়েচড়ে বসেছে ইসি।

সম্প্রতি জেকেজি চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা এবং তার আগে রিজেন্টের শাহেদ করিম মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুইবার ভোটার হয়ে দু’টি এনআইডি সংগ্রহ এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনআইডি সংশোধন করেন।

এই দুই ঘটনার পর এনআইডি অনুবিভাগের কাছে ব্যাখ্যা চায় ইসি। কিন্তু যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তা সন্তোষজনক নয় জানিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেন ইসি সচিব। আর ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে ইসির বাইরের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, উচ্চ পর্যায়ের ওই কমিটিতে বুয়েট/ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আইটি বিশেষজ্ঞ, প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা থাকবেন। এদের সহায়তার জন্য রাখা হবে ইসির বিশেষজ্ঞও।

কী কারণে এই ধরণের জালিয়াতি বন্ধ করা যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। এক্ষেত্রে ইসির সিস্টেমের কোনো ত্রুটি আছে, নাকি কারো জোগসাজশে এই কাণ্ড হচ্ছে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিজেদের কমিটি দিয়ে হয়তো ভালো কোনো ফল পাওয়া যাবে না। তাই বাইরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কারিগরি কমিটি করতে বলেছি। যারা আমাদের পুরো সিস্টেমটাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে যে, আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিতে কোনো ফাঁক ফোকর আছে কি-না।

বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ভোটারের তথ্য আছে। এছাড়াও আছে রোহিঙ্গাদের তথ্য। এক্ষেত্রে কেউ ভোটার হওয়ার আবেদন করলে প্রথমে তা রোহিঙ্গা সার্ভারে ম্যাচ করা হয়, সেখানে না মিললে দেশের নাগরিকদের সার্ভারে চেক করা হয়। এই দু’টো সার্ভারের কোনোটিতেই যদি না মেলে, তবেই একজন ব্যক্তি নতুন ভোটার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।

ভোটার তালিকা আইন ও জাতীয় পরিচয়পত্র আইন অনুযায়ী, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ ভোটার হলে বা দ্বৈত ভোটার হলে, সেটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের জন্য এক বছরের জেল ও আর্থিক জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২০
ইইউডি/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।