পটুয়াখালী: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অন্যতম সেবামূলক কার্যক্রম হলো নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়া। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে স্বয়ংক্রিয় ফিঙ্গার প্রিন্ট শনাক্তকরণ সিস্টেম (অ্যাফিস) ম্যাচিং না থাকায় বাদ পড়া ভোটাররা এ সেবা নিতে পড়ছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে, হচ্ছে হয়রানিসহ বিলম্ব।
সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, দ্বৈত ভোটার নিবন্ধন বা একাধিক এনআইডি নেওয়া প্রতিরোধে বাদপড়া ভোটারদের শনাক্ত করণে অ্যাফিস ম্যাচিং না থাকায় গ্রাহক সেবায় বাড়ছে হয়রানি। সেবা দিতেও হচ্ছে বিলম্ব।
এ রকমই হয়রানি শিকার ও সেবা নিতে বিলম্বে পড়েছেন সেই ভিক্ষুক দম্পত্তির একজন সুলতান ডাক্তার (৮০)। যাকে নিয়ে কয়েকদিন আগে দেশের স্বনামধন্য কয়েকটি মিডিয়া ছিল সরবর। “পরনের কাপড় নেই, স্ত্রীর ওড়না পরেন স্বামী” শিরোনামে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশের পর সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি আশ্বাস পেয়েছিলেন সরকারে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্কভাতার। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গিয়েই বাজে ঝামেলা। দম্পতির স্বামী সুলতান ডাক্তারের নেই এনআইডি। আবার স্ত্রী সকিনা বেগমের বয়স বাস্তবে ৭০ হলেও পরিচয়পত্রে দেওয়া হয়েছে ৫০ বছর।
সুলতান ডাক্তারের ভাষ্যমতে— ঢাকায় রিকশা চালানোর জন্য আগে পটুয়াখালী ছিল না বিধায় ভোটার হতে পারেননি তিনি। কেউ উদ্যোগ নিয়ে করেও দেননি। কয়েকবার নিজ থেকেই গিয়েছিলেন নির্বাচন কার্যালয়ে। কিন্তু তাদের চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্রও নিতে পারেননি তিনি। তাই ভোটারও হতে পারেননি।
প্রতি বুধবার পটুয়াখালী জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে নতুন ভোটার বা বাদ পড়া বয়স্ক ও মধ্য বয়স্কদের নিবন্ধন করা হয়ে থাকে। সুলতান ডাক্তারকেও সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভোটার নিবন্ধন করার জন্য। কিন্তু আগে ভোটার হয়েছে কি-না সেটা যাচাই করতে না পারার কারণে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যদি জেলা বা উপজেলা কার্যালয়ে দ্বৈত ভোটার নিবন্ধন বা একাধিক এনআইডি নেওয়া প্রতিরোধে অ্যাফিস ম্যাচিং পদ্ধতি চলমান থাকতো, তবে তাৎক্ষণিক যাচাই করে নিবন্ধন করা যেত বলে জানান কর্মকর্তরা।
কারণ দ্বৈত ভোটার নিবন্ধন বা একাধিক এনআইডি নেওয়া রোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে ইসি। জারি করা হয়েছে— জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০১০, ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ওপর বিশেষ নির্দেশনা। এ কারণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান খলিফা বাংলানিউজকে বলেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধিতে ভোটার নিবন্ধন ও স্মার্ট ডিজিটাল এনআইডি দেওয়ার মাধ্যমে এ সেবাকে যুগোপযোগী ও বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইসি। বর্তমানে ভোট দেওয়া ছাড়াও এনআইডি বিহীন কোনো নাগরিককে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ কোনো সেবা দেওয়া ও নেওয়া প্রায় অসম্ভব।
এদিকে, দ্বৈত ভোটার নিবন্ধন বা একাধিক এনআইডি নেওয়া রোধ করলেও মাঠ পর্যায়ে অ্যাফিস ম্যাচিং না থাকায় গ্রাহক সেবায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে এবং কেউ দ্বৈত ভোটার নিবন্ধন বা একাধিক এনআইডি নিলেও শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ফলে আইন প্রয়োগ করা যাচ্ছে না।
জিয়াউর রহমান খলিফা আরও বলেন, ইসির কাছে আমরা অ্যাফিস ম্যাচিং পদ্ধতি চালু করণের জন্য আবেদন করেছি। আশা রাখছি, সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো। তবে সুলতান ডাক্তারের মতো যারা সমস্যায় পড়ছেন, তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানে কাজ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২১
এসআরএস