পাবনা: আসন্ন পাবনায় তৃতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ছেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রচার-প্রচারণায় উৎসব মুখোর হয়ে উঠলেও যেকোনো সময় সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সাধারণ ভোটারা।
অপরদিকে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নৌকা এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সমর্থন নিয়ে বেশ জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে। ভোটের মাঠে সরকার দলীয় নৌকার পক্ষে ও বিপক্ষে ভাগ হয়ে কাজ করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। দলের উভয় মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের চলছে পাল্টা-পাল্টি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও অঞ্চল ভিত্তিক পথসভা। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে চান বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। আর নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে জেলা পুলিশ।
আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পাবনা পৌরসভার তৃতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে সরকার দলীয় নৌকার মেয়রসহ পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকী নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাবনা জেলা যুবলীগের বর্তমান আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলী মুর্তজা বিশ্বাস সনি।
অপরদিকে দলের বিপক্ষে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়ে নারিকেল গাছ প্রতীকী নিয়ে নাগরিক মঞ্চের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শরিফ উদ্দিন প্রধান। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি আর পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচি। মেয়র প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মাঠে নির্বিঘ্নে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী সাবে ভিপি জেলা বিএনপির নেতা নূর মোহম্মদ মাসুম বগা।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকী নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মো. মাহাবুবুল হক রাজন ও হাতপাখা প্রতীকী নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক।
পাবনা পৌর এলাকায় মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৪৪ জন। পুরুষ ভোটার ৫৪ হাজার ২০৪ জন আর নারী ভোটার ৫৮ হাজার ৪০ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৩৯টি ওয়ার্ড -১৫টি। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭ জন আর সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বী।
নৌকার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, এই পৌর নির্বাচনে দলের সবাই নৌকার পক্ষে আছেন। গুটিকয়েক সুবিধাভোগী নৌকার বিপক্ষে কাজ করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে কেউ নাই। সব অপশক্তিকে পরাজিত করে আগামী পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে আমরা ডিজিটাল পৌরসভা গঠন করবো।
নির্বাচনের বিষয়ে নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক ইদ্রিস আলী বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, সবাই একত্রিত হয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এবার আমাদের মন মতো মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে মনে করছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৩০ জানুয়ারি ভোট বিপ্লব হবে।
দলের মধ্যে দ্বিধা বিভক্ত ও নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার বিষয়ে নৌকার মেয়র প্রার্থী আলী মুর্তজা বিশ্বাস সনি বাংলানিউজকে বলেন, উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য আগামী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিকল্প নেই। এই নির্বাচনের সবাই নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন। দলের মধ্যে বিভ্রান্তকারীদের সঙ্গে তৃণমূল আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ নেই। সব বাধা অতিক্রম করে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বিজয় লাভ করবে।
নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শরিফ উদ্দিন প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দলের বিরুদ্ধে না। দলের ক্রান্তিকালে দলের জন্য জীবন বাজি রেখেছি। আজ হাইব্রিড ব্যবসায়ীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চান। তার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। আমরা দলের সবাই ওই হাইব্রিড প্রার্থীকে বয়কট করেছি। দলের সবাই আমাকে সমর্থন দিয়ে মেয়র প্রার্থী করেছেন। আগামী নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে এই পৌরবাসীর চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা হবে।
দলের দ্বিধা বিভক্ত ও এ্ই নির্বাচনের বিষয়ে ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নূর মোহম্মদ মাসুম বগার বাংলানিউজকে বলেন, এটা একটি সুযোগ বলা যায়। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। এখানে দলের একজন প্রার্থী। সবাই কাজ করছেন নির্বাচনে। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তবে এখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাহাবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।
আসন্ন নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন কেন্দ্রিক পৌর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সব স্থানে সাদা পোশাকের পুলিশসহ টহল জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
এসআরএস