ঢাকা: চলমান পৌরসভা নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং ওই বিদ্রোহী প্রার্থীকে যারা সমর্থন দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দলের সিদ্ধান্তের এই বিরোধীতাকারীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, চলমান পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় দলের লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন এবং করছেন। ইতোমধ্যে তিন ধাপে পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীতে চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেক ধাপেই বিভিন্ন পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন এবং করছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে কোনো কোনো জায়গায় দলের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর পেছনে স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও এমপি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও দলের প্রাভাবশালী নেতাদের সমর্থনের অভিযোগ রয়েছে।
সেই সব প্রভাবশালী নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে বিভিন্নভাবে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং যারা তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থী, তাদের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা আরও জানান, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রার্থী হওয়া এবং বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া চরম সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ। এটা যারা করছেন তারা দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করছেন। এতে দলের চেইন অব কমান্ড নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের তালিকা দলের হাতে রয়েছে। যারা বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছেন, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন বা করছেন তাদের তালিকা তৈরি ও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীতে তারা কোনো নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন না।
গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায়ও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা করার নির্দেশ দেন। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে তাদের ব্যপারে তিনি খোঁজখবর নিয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। দলের সভাপতির নির্দেশের পর আটটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের নেতারা এ তালিকা তৈরির কাজ ও অভিযুক্তদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। পৌর নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এই তালিকা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং তাদের যারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছেন বা করছেন তাদের সবার বিরুদ্ধেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি দলের প্রভাবশালী নেতাই হোন বা মন্ত্রী-এমপি যেই হোন। এরা কেউই ভবিষ্যতে দলের কোনো মনোয়ন পাবেন না। এটা আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তারা তো প্রকাশ্য। কিন্তু যারা বিদ্রোহীদের বিভিন্নভাবে সমর্থন দিয়েছেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া, তথ্য সংগ্রহ ও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দলের সভাপতি নির্দেশ দেওয়ার পরই এ কাজ শুরু হয়ে গেছে।
বাাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২১
এসকে/এমজেএফ