বরগুনা: দুই কন্যার জননী সোহেলী পারভীন, স্বামী হারিয়েছেন অনেক আগে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান এমনকি রাজনীতিবিদের স্ত্রীও বটে।
সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন, কোথাও এর আগে দলীয় প্রতীকে কিংবা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান কিংবা অন্য জনপ্রতিনিধি পদে ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ পাননি বরগুনার কোনো নারী।
সদ্যসমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে জেলায় প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহেলী পারভীন মালা। তিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে।
সোহেলী পারভীন মালা ছিলেন জেলার প্রথম নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলার প্রথম কোনো নারী জনপ্রতিনিধি প্রার্থী। ইউপি নির্বাচনে পাঁচ পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বির সঙ্গে লড়াইয়ে জিতেছেন মালা। আর এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি গড়েছেন অনন্য এক রেকর্ডও।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মালা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল কালাম আজাদ (আনারস প্রতীক) পেয়েছেন তিন হাজার ৬৬২ ভোট।
মালা আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত এ কে এম নুরুল হক তালুকদারের স্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এছাড়াও তিনি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের টানা তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসনাত আব্দুল্লাহর মেয়ে।
দুই কন্যার জননী সোহেলী পারভীন মালার স্বামী মারা যাওয়ার পর পুরুষশূন্য হয়ে পরে তার পরিবার। এ কারণে পারিবারিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি স্থানীয় ভোটারদের অনুরোধে এ নির্বাচনে প্রার্থী হন তিনি। এরপর পান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।
স্থানীয়রা জানান, ভোটের মাঠে প্রথম হলেও স্বামী প্রয়াত নুরুল হক তালুকদার একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় প্রচারকাজে মালার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার নিজ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালান মালা।
তাছাড়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে রাজনীতিতে তার পদচারণ আগে থেকেই। ইউপি চেয়ারম্যান বাবার রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা, বিয়ের পর স্বামীর কারণে ইউনিয়নের রাজনীতিতে আগে থেকেই তিনি দক্ষ। তাই নির্বাচনে বিজয়ী হতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি তার। আর তাই বিজয়ীও হয়েছেন অনেক ভোটের ব্যবধানে।
এ বিষয়ে সোহেলী পারভীন মালা বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের ০৪ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার স্বামী মারা যান। তার মৃত্যুর পর আমার মনে হয়েছে, এলাকার লোকজন তাদের অভিভাবক হারিয়েছেন। পরে তাদের অনুরোধে আমি একপর্যায়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমায় মনোনয়ন দিয়ে সম্মানিত করেছেন।
তিনি বলেন, যেমনিভাবে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিয়ে আমাকে সম্মানিত করেছেন, ঠিক তেমনি আমার এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সম্মানিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। বরগুনার প্রথম নারী চেয়ারম্যান আমি। এছাড়াও জেলায় প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নারীও আমি। তাই সাধারণ মানুষের প্রতি আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য অনেক বেশি। তাই আমি আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য যথাযথভাবে পালনের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
বরগুনার নারীনেত্রী সোহেলী পারভিন ছবি বাংলানিউজকে বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সঠিক ভোটাধিকার, নীতিনৈতিকতা থাকলে একজন নারী যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন তার উদাহরণ মালা। রাজনীতিতে পরিবারতন্তু যাতে না হয় সে ব্যাপারেও ভূমিকা রাখতে পারেন মালা।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করবেন এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজ করবেন মালা এই প্রত্যাশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
এসআরএস