ঢাকা: করোনাকালে জরুরি ভিত্তিতে নাগরিকদের ভোটার করে নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সরবরাহ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী, প্রবাসী, টিকাদানে ইচ্ছুকরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।
সরকার ঘোষিত কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেও সপ্তাহে একদিন করে অফিস খোলা রেখে এ সেবা দিচ্ছেন সংস্থাটির মাঠ কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, রাজধানীতে প্রতি মঙ্গলবার এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর বাইরে একেক থানা বা উপজেলা নির্বাচন অফিস একেক দিন সেবা দেওয়ার জন্য অফিস খোলা রাখা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৭ জুলাই এক অনলাইন বৈঠকে মাঠ পর্যায়ে এনআইডি সেবা সতর্কতা অবলম্বন করে চালু রাখার সিদ্ধান্ত দেয় ইসি। এতে টিকা কার্যক্রম, বিদেশ গমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম ইত্যাদির জন্য জরুরি ভিত্তিতে সেবা দিতে বলা হয়। সেজন্য কর্মকর্তারা সপ্তাহে একদিন অফিস খোলা রেখে স্বশরীরে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
উত্তরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তারা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কমিশনের নির্দেশনার পর আমরা নিজেরা ঠিক করে নিয়েছি সপ্তাহের কোন দিনটিতে অফিস খোলা রেখে কার্যক্রম চালানো হবে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরে প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমরা জানিয়েও দিচ্ছি।
এছাড়া ঢাকার বাইরেও যে যার সুবিধা মতো দিনটিতে কাজ করছেন অফিস খোলা রেখে।
ডেমরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা আল আমিন জানান, এনআইডি সেবা দেওয়ার জন্য আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে যারা ভোটার হননি, অথচ এনআইডি প্রয়োজন; তাদের প্রথমে ভোটার করে নেওয়া হচ্ছে।
এজন্য প্রথমে অনলাইন থেকে ভোটার হওয়ার ফরম ডাউনলোড করে পূরণ করতে হবে। তারপর সেটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় দলিল নিয়ে স্বশরীরে এসে জমা দিয়ে ছবি তোলা এবং অন্যান্য কার্যাদী সম্পন্ন করতে হবে।
নতুন ভোটার হয়ে জরুরি সেবা নিতে গেলে ১৩ ধরনের দলিলপত্র জমা দিতে হবে সেবাগ্রহীতাকে।
এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে- বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র/ছাত্রী, মেডিক্যাল ছাত্র/ছাত্রী এবং প্রবাসী বাংলাদেশি, ভ্যাক্সিনেশন বা জরুরি প্রয়োজনে যাদের ভোটার নিবন্ধন প্রয়োজন, তাদের http:/services.nidw.gov.bd ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ পূরণপূর্বক প্রিন্ট করে হার্ড কপিতে আবেদকারীর স্বাক্ষর, শনাক্তকারীর স্বাক্ষর এবং যাচাইকারী সিলসহ স্বাক্ষর প্রদান করে স্বশরীরে অফিসে উপস্থিত হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
ভোটার নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলাদি:
১) অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (অনলাইনে যাচাইকৃত কপিসহ)।
২) সনদধারীদের ক্ষেত্রে শিক্ষা সনদ- -পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি।
৩) সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক নাগরিকত্ব সনদের মূল কপি।
৪) পিতা-মাতার এনআইডি এর কপি (পিতা/মাতা মৃত হলে মৃত্যু সনদ প্রদান করতে হবে)।
৫) বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রীর এনআইডির কপি ও বিবাহের নিকাহনামা।
৬) বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স/ইউটিলিটি বিলের কপি এবং ফ্ল্যাট মালিকানার কপি।
৭) ভাড়াটিয়া হলে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিনামা, অনাপত্তিপত্র এবং বাড়ি ভাড়া রশিদ।
৮) প্রবাসী হলে পাসপোর্টের কপি অ্যারাইভাল সিল ও টিকেটসহ কপি।
৯) দ্বৈত নাগরিক হলে, দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি।
১০) রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট ও শিক্ষার্থী পরিচয়পত্রের কপি।
১১) ফরম-২ এর ৩৪, ৩৫ নম্বর তথ্যে শনাক্তকারীর ঘওউ নম্বর ও স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে।
১২) ফরম-২ এর ৪০, ৪১, ৪২ নম্বর তথ্যে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক সিলসহ স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে।
১৩) রেজিস্ট্রেশন অফিসারের চাহিদামত অন্যান্য দলিলাদি।
এ ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফরম-২ ছাড়া সব কাগজপত্র স্বত্যায়িত করে জমা দিতে হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, টিকা কার্যক্রম, বিদেশ গমন, শিক্ষার্থিদের ভর্তি কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্যই এনআইডি চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ১৭ লাখের মতো নাগরিকের তথ্য আছে। এ সার্ভারে রক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতে নাগরিকদের এনআইডি সরবরাহ করে থাকে ইসি।
বর্তমানে স্মার্টকার্ডের পাশাপাশি লেমিনেটিং করা এনআইডিও দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১২০ জনের মত কর্মকর্তা-কর্মচারি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সম্প্রতি দু'জন কর্মকর্তা মারা গেছেন। হাসপাতালে আছেন কেউ কেউ। একজন নির্বাচন কমিশনারও করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২১
ইইউডি/এসআই